মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লাকে শহিদ বলার ঘটনায় করা দুই মামলায় ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকার সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
গাজীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহের দুটি মামলায় বিচার চলছে।
বুধবার রাতে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার গাজীকে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় গাজী অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে তাকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে গাজীর পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী একজন সাংবাদিক নেতা। তাকে জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই যে কোনো শর্তে তাকে জামিন দেয়া হোক।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান আসাদ এই আবেদনের বিরোধিতা করেন। বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক। তিনি অনবরত রাষ্ট্র ও সরকারর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে সর্বদা দেশ ও জাতির ক্ষতিসাধন করে চলেছেন।’
দুই পক্ষের শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করে সংগ্রাম সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বুধবার হাতিরঝিল থানা পুলিশ পরোয়ানা নিয়ে রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতার করে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ে তাকে ‘কসাই কাদের’ আখ্যা দেয়া হয়। তবে দণ্ড কার্যকরের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর রায় কার্যকরের বার্ষিকীতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদৎবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রাপ্ত আখ্যা দেয়া হয়। দাবি করা হয়, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জেসিও মফিজুর রহমানের ডাকে কাদের মোল্লা এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। পোড়ানো হয় সংগ্রাম পত্রিকার কপি। ওই ঘটনার পর সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে ওই রাতেই হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।
মামলায় দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়।
গাজীকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ উপ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করার পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে খেপিয়ে তুলে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে এ উস্কানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।'
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাকেই প্রথম ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দণ্ড কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।
ওই বছরের ৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মিরপুরে সাড়ে চার হাজার মানুষকে হত্যায় কাদের মোল্লার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। তখন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে গড়ে উঠে অভিনব এক আন্দোলন। গণজাগরণ নামে এই আন্দোলনের মুখে সরকার আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সুযোগ দেয়। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়ায়।