মা গত হয়েছেন সাত মাস আগে। শতবর্ষী বাবা হয়ে পড়েছেন নিঃসঙ্গ। এই অবস্থায় ছেলে উদ্যোগী হয়ে বাবাকে বিয়ে দিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরে। এ নিয়ে এলাকায় চলছে মুখরোচক আলোচনা।
বর আহাদ আলী মণ্ডল ওরফে আদির বয়স ১০৫, কনে অমেলা বেগমের বয়স ৮০ বছর।
অমেলা আহাদের ঘরের মানুষই। তিনি তার ছোট ভাই টুলু মণ্ডলের স্ত্রী ছিলেন। টুলু মারা গেছেন ১০ বছর আগে। তাই কনে খুঁজতে কষ্ট হয়নি। কেবল রাজি করাতে হয়েছে দুজনকে।
বুধবার রাতে নাটোর সদর উপজেলার পুকুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে শতাধিক গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এই বিয়ে হয়।
বিয়ের দেনমোহরও অন্য বিয়ের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন, ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা। আহাদ আলী মণ্ডল ৬৫০ টাকা নগদ পরিশোধ করে ‘শুভকাজ’ সম্পন্ন করেন।
বিয়ের খবর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নব দম্পতিকে দেখতে বিয়ে বাড়িতে ভিড় জমে। গ্রামবাসী এতটাই খুশি হয়েছে যে তারা চাঁদা তুলে ভোজের আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে যান স্থানীয় দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার ওমর শরীফ চৌহান।
তিনি বলেন, 'আমি খুব খুশি হয়েছি। গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি।'
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আহাদের জন্ম ১৯১৫ সালে। তিনি আট সন্তানের জনক। বিয়ে হয়ে গেছে সবার। থাকেন আলাদা। আহাদ থাকতেন মেজো ছেলের সঙ্গে।
বিয়ের উদ্যোক্তা আহাদের এই ৫০ বছর বয়সী ছেলে মোশাররফ মণ্ডল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মা মারা গেছে মার্চ মাসে। এই বয়সে বাবা একা হয়ে পড়েছেন। আমরাও সেভাবে সময় দিতে পারি না। তাই আমরা ভাইবোনরা মিলে কথা বলে এই বিয়ে ঠিক করেছি।’
আহাদ আলী জানান, চার ছেলে ও চার মেয়ে থাকলেও স্ত্রী না থাকায় বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্বে দিন কাটছিল। এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে অমেলা বেগমকে বিয়ে করেছেন। তিনি সবার দোয়া চান।
আহাদ এই বয়সেও শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ শক্তসামর্থ্য। তিনি নিজের জীবিকা নির্বাহ নিজেই করেন। পান-বিড়ি বিক্রি করে আয় করেন।
পাত্রী অমেলা বেগমও ছিলেন নিঃসঙ্গ। বিয়ে হয়ে গেছে দুই মেয়ের। একাকী জীবনে একজন সঙ্গী পেয়ে খুশি তিনিও।
অমেলা বলেন, ‘আহাদ আলী মণ্ডল পাত্র হিসাবে অনেক ভালো। উনি মিশুক প্রকৃতির লোক। দাম্পত্য জীবনে আমরা সুখি হব। আপনারা দোয়া করবেন’।
বলেই মুচকি হাসেন অমেলা বেগম।