এক দুই কিংবা তিন নয়, শত বছরের পুরনো সেই হাট। শুধু শতও নয়, গুনে গুনে ৫০০ বছরের পুরনো হাট। সেই হাটে বিক্রি হয় ঢাক-ঢোল।
দুর্গাপূজা এলেই বসে হাটটি। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারে বসে সেই হাট। স্থায়ী হয় তিন দিন।
ঐতিহ্য ধরে রেখে ঢাক-ঢোলের হাটটি পূজার দুই দিন আগে শুরু হয়ে চলে ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ঢাকি ও যন্ত্রীদলকে পূজারিরা মণ্ডপে মণ্ডপে ভাড়ায় নিয়ে যান।
শুধু ঢাক-ঢোলই নয়, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসিসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে এ হাটে। যন্ত্রীদল বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে পূজারিদের আকৃষ্ট করেন।
সাধারণত একটি ঢাক ১০ থেকে ১২ হাজার, ঢোল সাত থেকে আট হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে পাঁচ থেকে সাত হাজার, ব্যান্ড পার্টি ছোট ৩০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ।
পূজা উপলক্ষে রাজপ্রাসাদ থেকে বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হতো ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। এ জন্য ব্যবহার হতো নৌপথ।
যন্ত্রীদল কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই দিন আগে এসে পৌঁছাতেন।
তারা আরও জানান, পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা হতো। সেই সঙ্গে চলত বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা।
দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তিত হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারে গড়ে উঠে ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট।
তিন দিনের সেই হাটে ময়মনসিংহ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ব্রাক্ষ্রণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যন্ত্রীদল আসেন। দুর্গাপূজার আয়োজক ও পূজারিরা এই হাট থেকে পূজার দুই-একদিন আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যান।
যন্ত্রীদলের সদস্যরা জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা এখানে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসতেন। সেই সূত্রে তারাও আসেন। পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আয় রোজগারও ভালো হয় তাদের।
হাটের তত্ত্বাবধায়ক বেণী মাধব ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসা এ হাট কটিয়াদীর ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে।