যুদ্ধাপরাধের সাজায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কাদের মোল্লাকে শহিদ লেখায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমিন গাজীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের সংগ্রাম অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রুহুল আমিন গাজী বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ে তাকে ‘কসাই কাদের’ আখ্যা দেয়া হয়। তবে দণ্ড কার্যকরের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর রায় কার্যকরের বার্ষিকীতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদৎবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রাপ্ত আখ্যা দেয়া হয়। দাবি করা হয়, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জেসিও মফিজুর রহমানের ডাকে কাদের মোল্লা এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। পোড়ানো হয় সংগ্রাম পত্রিকার কপি। ওই ঘটনার পর সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে ওই রাতেই হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।
মামলায় দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়।
গাজীকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ উপ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করার পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে খেপিয়ে তুলে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে এ উস্কানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।'
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাকেই প্রথম ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দণ্ড কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।
ওই বছরের ৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মিরপুরে সাড়ে চার হাজার মানুষকে হত্যায় কাদের মোল্লার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। তখন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।