ফেনীতে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চে হামলার প্রতিবাদে ও নয় দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বুধবার দুপুরে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেন অবরোধকারীরা। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে শাহবাগ থেকে বাংলামোটর, মৎস্য ভবন ও সায়েন্সল্যাব এলাকার বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘ফেনীতে ধর্ষণ বিরোধী লংমার্চে বর্বর হামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই নয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ আন্দোলন চলবে।’
সমাবেশ বক্তব্য রাখেন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, নারী মুক্তি কেন্দ্রের নেত্রী সীমা দত্ত ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় নেতা রহমান মাহফুজসহ অনেকে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সচেতনতা তৈরিতে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে গত ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে লংমার্চ করে বেশ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গত ১৭ অক্টোবর ফেনী শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মোড় এলাকায় লংমার্চের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত এবং ছয়টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের ৯ দাবি
১. ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ‘ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ’ স্বরষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে।
২.পাহাড়ে সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৩. সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।
৪. ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞানে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিযন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
৫. তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগীকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তার আইনি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে ঝুলে থাকা মামলা দ্রুত শেষ করতে হবে।
৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭৯-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
৮. পাঠ্যবইয়ে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দচয়ন বাদ দিতে হবে।
৯. গ্রামীণ সালিশে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে হবে।