নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে নৌপথে পণ্য পরিবহনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ লেবার আ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাসেম।
তিনি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার জন্য যাত্রীবাহী নৌযান এ কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। তবে সারাদেশে পণ্যবাহী বাল্কহেড, জাহাজসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
১১ দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মহানগরীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে কর্মসূচির সমর্থনে এই মিছিল বের হয়।
খুলনা লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ধর্মঘটের সমর্থনে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গতকাল এবং আজ বিক্ষোভ হয়েছে। বেতন-ভাতাসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
নারায়ণগঞ্জে কর্মবিরতির কারণে নৌযানে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।
শ্রমিকরা বলছেন,১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা,ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীতে কোন পণ্যবাহী নৌযান চলবে না।
নারায়ণগঞ্জ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সবুজ সিকদার জানান নিউজবাংলাকে জানান, নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্য দাবিগুলো মানতে হবে। এসব দাবি পূরণে শিগগির কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে তারা কাজে যোগ দেবে না।
নারায়ণগঞ্জের মক্কা-মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী রাগিব হাসান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, জাহাজে লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় সারাদেশে পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া বালু, পাথর ও তেল পরিবহন বন্ধ থাকায় সংকট বাড়বে।
নারায়ণগঞ্জ গম চাল আটা মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, পণ্যবাহী জাহাজ বন্ধ থাকার প্রভাব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। বাজারে খাদ্যদ্রব্যসহ নানা পণ্যের ঘাটতি দেখা দেবে। এতে ভোগান্তি বাড়বে ক্রেতাদের।
দাবি পূরণে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আশ্বাস মিলেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, ‘এখন আর নতুন করে আশ্বাসের কিছু নেই। বাস্তবায়নের জন্য বেঁধে দেয়া সময়সীমাও শেষ। সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চলবে।’
শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি
* বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা
* ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান
* ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান
* সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ
* এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা মূল্যায়ন
* কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ
* প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান
* নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন
* মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা
* নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং
* নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।