বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবনের দাম কি আড়াই লাখ টাকা

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ২২:৫৮

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টেসে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ পরিবারের ৪৫ শ্রমিক অবস্থান নিয়েছেন প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে। টানা ৩২ দিনের অবস্থানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

ক্ষতিপূরণ দাবিতে টানা ৩২ দিন প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে আছেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন্স গার্মেন্টসে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ পরিবারের ৪৫ জন, যারা ২০১২ সালের সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।

সোমবার নিউজবাংলাকে তারা জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবে যারা এসেছেন তারা সবাই এখনো গুরুতর অসুস্থ। কারও মেরুদণ্ডে সমস্যা, কারো শরীরে অন্য সমস্যা। কারো কারো পোড়া স্থানে রয়ে গেছে যন্ত্রণা। তারা কেউই আর নতুন করে কোথাও কাজে যোগ দিতে পারছেন না।

তাদের অভিযোগ, আট বছর ধরে তারা শুধু ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার আশ্বাস পেয়ে আসছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন্স লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ১১৪ শ্রমিক পুড়ে মারা যান; গুরুতর আহত হন অনেকেই।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কথা হয় নাসিমা আক্তার নামে একজনের সঙ্গে, যিনি তাজরীন গার্মেন্টসের চার তলায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

নাসিমা জানান, ওই ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে, দুই হাতের হাড়েও চিড় ধরেছে। চাইলেও এখন আর স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।

নাসিমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালিক চক্রান্ত করে আগুন লাগায় দেয়- তা আপনি জানেন, সারাবিশ্বও জানে। গেটে তালা মেরে দেয়া হয়। আমি আগুনের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে কারখানাটির চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ি।

‘১১৪ জন শ্রমিক মারা যায়, ৫৩ জন নিখোঁজ হয়, মানে শনাক্ত করা যায়নি। তারা আসলে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। তাদের কবর জুরাইন কবরস্থানে। আমরা ৩০০ শ্রমিক আহত হই।’

নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আহতদের মধ্যে যাদের বাড়িঘর আছে, যারা চলার মতো, তারা চলে গেছে। যারা একটু কাজ করতে পারছেন, তারাও করছেন। কিন্তু আমরা যারা একেবারেই পঙ্গু তারা সারাজীবন কোনো কাজকর্ম করতে পারব না।

‘আমরা এক মাস দুই দিন এখানে পড়ে আছি। মালিকপক্ষ, বিজিএমইএসহ সবাই আমাদের বলছিল ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, পুনর্বাসন করা হবে। ওই আশায় আমরা এত বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষ, সরকারপক্ষ, বিজিএমইএ কেউ কিছু করে নাই।’

তিনি জানান, ঘটনার চার বছর পর কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মাধ্যমে। কাউকে এক লাখ, কাউকে দুই লাখ, কাউকে আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল তখন।

নাসিমা আক্তার আড়াই লাখ টাকা পেয়েছিলেন জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার চিকিৎসা করতেই খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এখন আপনারাই বলেন- ওই আড়াই লাখ টাকা দিয়ে আমার কী হবে। এতে কী হয়? আমার জীবনের দাম কি আড়াই লাখ টাকা?’

নাসিমা আক্তাররা জানান, ক্ষতিপূরণ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। এই ৩২ দিনে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সুস্থ হলেই আবার প্রেস ক্লাবে আসছেন।

শুধু ২৫ পরিবার এখানে কেন?

আগুনের সময় আহত হয়েছিলেন ৩০০ জন শ্রমিক। প্রেস ক্লাবে ৪৫ জনের অবস্থান কেন- জানতে চাইলে শ্রমিকেরা জানান, তাদের মধ্যে যারা আসেননি, তাদের অনেকেই এখন স্বচ্ছল।

শ্রমিক মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা এখানে আছি খুবই দরিদ্র এবং অসহায়। আট বছর ধরে আমরা কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছি। এখানে যারা এসেছে তাদের সবাই গুরুতর অসুস্থ। ৩২ দিন ধরে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আছি, কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ-খবরও নিল না।’

এ বিভাগের আরো খবর