এক বছর ধরে পানি সঙ্কটে ভুগছেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি বড় অংশের বাসিন্দারা। সম্প্রতি সঙ্কট প্রকট আকার নিয়েছে। রোববার সকালে পাশের প্রধান সড়ক রোকেয়া সরণিতে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, পূর্ব শেওড়াপাড়ায় প্রায় দুই মাস ধরে পানি তীব্র সঙ্কট। তাই রোববার পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে ফের সড়ক অবরোধ করবেন তারা।
সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করার পর পরিস্থিতি দেখতে এই প্রতিবেদক যান পূর্ব শেওড়াপাড়ার জামতলা এলাকা। সেখানে কথা হয় তানজিমা বেবি নামে এক গৃহবধূর সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে বেবি জানান, অন্য বাসিন্দাদের মতো তাকেও বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে রান্নাসহ অন্যান্য কাজে। এজন্য দিনের বড় একটা সময় চলে যায় তার।
তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে বেশিরভাগ সময় পানি কিনে ব্যবহার করছি। তারপরও আমাদের বাড়িতে চার-পাঁচ হাজার টাকা বিল আসে। বাসার মানুষ ৪-৫ দিন পরপর গোসল করে, তাও সামান্য পানি দিয়ে।’
একই এলাকার আরো কয়েকজনও রোববার বিকেলে পানি নিয়ে তাদের গত দুই মাসের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
তারা বলেন, গত এক বছর ধরে পানি সঙ্কটে ভুগছেন জামতলা এলাকার বাসিন্দারা। আগে একটু একটু পানি আসত। গত দুই মাস যে অবস্থা বলে বোঝানো সম্ভব না। দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই গরমেও ঠিকমতো গোসল করতে পারছেন না তারা।
সেখানে কথা হয় হাজী মসজিদ-এ-বাহতুল হারাম মসজিদের ইমাম হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, এই মসজিদে সাধারণত প্রতি ওয়াক্তে দেড়শ জন নামাজ আদায় করেন। শুক্রবারে জুম্মার নামাজে থাকেন প্রায় এক হাজার মুসল্লি। এতো মুসল্লির ওজুর পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
প্রায় এক বছর ধরে পানির সমস্যায় থাকার কথা জানিয়ে হাবিবুর রহমান, গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো পানিই আসে না লাইনে। মসজিদে অবস্থানকারীরা গোসল করতে পারছেন না ঠিক মতো। পাইপে পানি না থাকায় পানির ফিল্টার কোনো কাজেই আসছে না; পানি খেতে হচ্ছে কিনে।
ওয়াসা থেকে পানি কিনে কোনোমতে মসজিদের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ইমাম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাঝে মধ্যে অর্ডার দিয়েও সময়মতো পানি পাওয়া যায় না। গত সোমবার যে পানির অর্ডার দেয়া হয়, আজ রোববারও তা আসেনি।
‘অবশ্য গত শুক্রবারে ওয়াসার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নামাজ পড়তে এসে মসজিদের পানি সঙ্কট দেখে বিশেষ ব্যবস্থা নেন। ওই মুসল্লি তার নিজের বাসায় পানি নেই বলে ওয়াসার পানির অর্ডার দিয়েছিলেন। তিনি সেই পানিই মসজিদে দিয়ে দেন।’
পানির এমন সমস্যা শুধু পূর্ব শেওড়াপাড়ায় নয়, পুরা শেওড়াপাড়া জুড়েই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পশ্চিম শেওড়াপাড়ার তিন নম্বর গলির ৮৫ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, টিন শেড বাড়িটিতে সাতটি পরিবারের বসবাস। প্রত্যেক পরিবারে ৪-৫ জন করে সদস্য।
তাদের একজন মকবুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বছর ধরেই পানি সঙ্কটে আছি। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ঠিক মতো গোসল করতে পারি না। যে পানি আসে তাতে প্রচুর ময়লা।’
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওয়াসার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক হাজার ফুট নিচ থেকে পানি তোলা হয়। পানিতে কোনো ময়লা থাকার কথা নয়। তবে অনেকে সরবরাহ লাইন ফুটো করে চোরাই পথে পানি নেন। ওইসব ফুটো দিয়েই ময়লা ঢোকে।’
পশ্চিম শেওড়াপাড়ার তিন নম্বর গলির চারতলা ভবনের বাসিন্দা আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের ভবনে আটটি পরিবারের বসবাস। এক বছর ধরেই পানির কষ্টে আছি আমরা। গত দুই মাস কষ্ট আরো বেড়েছে। গত দুই দিন তো পানি আসছে ফোঁটায় ফোঁটায়।
‘যেখানে গত মাসেও ছয় হাজার টাকা বিল এসেছে। এসব নিয়ে ওয়াসাকে জানালে বলে এলাকার সব ভবনেরই একই অবস্থা। চেষ্টা করছি, সমাধান করতে।’
জামতলা এলাকার মাহফুজ ক্লিনিক পানির পাম্পের অপারেটর আতিকুল হকও এক বছর ধরে পানির এমন সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পে যেখানে মিনিটে ২২০০ লিটার পানি ওঠার কথা, সেখানে উঠছে ৫০০ লিটার। সবমিলে যে পানি ওঠে তাতে ওয়াসার কারেন্ট বিলের টাকাও হয় না।’
আতিকুল হক বলেন, শীতকালে পানির চাহিদা কম থাকে তাই অভিযোগও কম আসে। কিন্তু গরমে পানির চাহদা বেশি, অভিযোগও বেশি। জামতলা এলাকায় কাছাকাছি তিনটি পানির পাম্প আছে। কিন্তু সেগুলো দিয়ে যে পানি উত্তোলন করা হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই এক পাম্প আরেক পাম্পকে সাপোর্ট দিতে পারে না।
সমস্যা সমাধানের উপায় কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী আমাদের নতুন একটা যায়গার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমরা দ্রুত পাম্প তৈরির কাজ শুরু করছি।’