জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন রোববার। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সড়কের বাড়িতে তার জন্ম, এখন যেটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’।
বঙ্গবন্ধু তার অতি আদরের এই সন্তানের নাম রাখেন ব্রিটিশ দার্শনিক বাট্রার্ন্ড রাসেলের নামে।
সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ছোট রাসেল সোনা বইতে লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না।
‘জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিলো রাসেল। ’
শিশু রাসেলের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। কারণ তার বাবা রাজনৈতিক বন্দি হয়ে কারাগারে ছিলেন দীর্ঘদিন।
শেখ রাসেল ছিলেন ভীষণ দুরন্ত। তার দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল বাই-সাইকেল। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ছাড়াই সাইকেলে করে স্কুলে যেতেন পাড়ার আর দশটি সাধারণ ছেলের মতো। বিখ্যাত সাংবাদিক এ বি এম মুসা স্মৃতিকথায় শেখ রাসেল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কদিন বিকেল পাঁচটার দিকে শাঁ করে ৩১ নম্বরের অপ্রশস্ত রাস্তা থেকে ৩২ নম্বরে ঢুকেই আমার সামনে একেবারে পপাতধরণিতল। গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ ছেলেটি…।‘
শেখ রাসেলকে নিয়ে তার গৃহশিক্ষক বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গীতালি চক্রবর্তী (দাসগুপ্ত) মন্তব্য করেন: ‘বয়সে অনেক ছোট হলেও শেখ রাসেলের হৃদয়-মন ছিল অনেক বড়। মানুষের উপকার করার জন্য সে যেন সবসময় এক পায়েই দাঁড়িয়ে থাকতো। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের প্রতি তার ছিল গভীর ভালোবাসা। শুধু তাই নয়, তার শিশুসুলভ সব আচরণ বা কর্মকাণ্ডের মধ্যে কেবলই সরলতাই নয়, আদর্শিক ও দার্শনিক একটা ভাবও ছিল। কোনো বিষয়ে কঠিন অবস্থানে থাকলেও যুক্তি দিয়ে তাকে টলানো যেত।‘
জাপানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ রাসেল
কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেখ রাসেল। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে ঘাতকেরা নিষ্ঠুরভাবে তাকেও হত্যা করে। মৃত্যুকালে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজন করছে " শেখ রাসেলের ৫৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ রাসেল আমাদের ভালবাসা" শীর্ষক অনুষ্ঠান।
সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ রাসেলের ম্যুরাল উন্মোচন করবেন।
দুপুর ১২টায়, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইডিবি) তে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজন করেছে একটি আলোচনা সভা।
তাছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সমমনা বিভিন্ন সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
(জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া ছবি)