পরিবারটিতে এই কান্না এই হাসি। নতুন অতিথি আসতে না আসতেই মৃত্যুর সংবাদ। আবার সমাহিত করতে গিয়ে শিশুটির নড়েচড়ে উঠা। বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না বাবা-মায়ের।
পুরো ঘটনাটি ঘটেছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। আর এই ঘটনায় মৃত ঘোষণা দেয়া চিকিৎসকের প্রতি জন্মেছে ক্ষোভ।
ডাক্তার কী ভেবে জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা করেছে, সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: মে-জুনে ঢাকায় বেশি কবর
শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শাহিনুর বেগম। কিন্তু খুশি হওয়ার সুযোগ ছিল না পরিবারটির। কারণ, নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে দেয়া হয় মৃত্যু সনদ।
শোক বুকে চাপা দিয়ে সদ্যোজাত শিশুর বাবা ইয়াছিন মিয়া সন্তানকে কবর দিতে নিয়ে যান আজিমপুর কবরস্থানে।
সেখানে কবরস্থানের লোকজন দাফন-কাফন বাবদ এক হাজার ৪০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সে সময় তার কাছে এত টাকা না থাকায় নিয়ে যান রায়েরবাজার কবরস্থানে।
এই বিলম্বের কারণে শিশুটির আর তার বাবার জীবন পাল্টে গেল। দ্বিতীয় কবরস্থানে হঠাৎ নড়ে ওঠে শিশুটি।
প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে মেয়েকে নিয়ে আবার যান হাসপাতালে। যেখান থেকে ‘মৃত’ আনা হয়েছিল সেই ঢাকা মেডিক্যালে ফিরিয়ে নেয়া হয় জীবিত শিশুটিকে।
নবজাতকের বাবা ইয়াসিন জানান, শিশুটি তার দ্বিতীয় সন্তান। এখন সে হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
ইয়াসিন জানান, তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করে যে সনদ দেয়া হয়েছিল, তা আবার নিয়ে গেছেন চিকিৎসকরা।
ইয়াসিন বলেন, বুধবার সন্তান প্রসবের জন্য তার স্ত্রীকে ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার স্ত্রীকে দেখে জানান, রক্তচাপ অনেক বেশি।
চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল, শিশুটি প্রসব না হলে তার স্ত্রীর রক্তচাপ কমবে না। তাই বুধবার রাতেই তাকে প্রসব কক্ষে নিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুই দিন চেষ্টার পরও শিশুকে স্বাভাবিক প্রসব করানো যায়নি।
নবজাতকের বাবা বলেন, শুক্রবার ভোরে শাহিনুরের আবার ব্যথা শুরু হয়। এরপর পৌনে পাঁচটার দিকে সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী।
চিকিৎসকরা তখন জানান, শিশুটি মৃত অবস্থায় জন্মেছে।
এরপর হাসপাতালের আয়া শিশুটিকে একটি প্যাকেটে মুড়িয়ে শয্যার নিচে রেখে দেন। কোথাও নিয়ে দাফন করতেও বলেন তাকে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নবজাতকটি জীবিত আছে, ভালো আছে। তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।’
শিশুটিকে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই মৃত ঘোষণার কারণ জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটা তদন্ত কমিটি করব। তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করব কেন এমনটি হয়েছে।’
নবজাতকের পরিবার তুরাগ থানার ধউর নিসাতনগর এলাকায় থাকে। তার মা গৃহিণী ও বাবা বিআরটিসি বাসের চালক।
এই ধরনের ঘটনা ঢাকা মেডিক্যালে এর আগেও ঘটেছে। মৃত ঘোষিত ভূমিষ্ঠ শিশু সমাহিত করার সময় বেঁচে উঠা নিয়ে বছর খানেক আগেও তোলপাড় হয়েছিল। তখনও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওই শিশুটিকে অবশ্য সে সময় বাঁচানো যায়নি। অপরিণত শিশুটি কয়েকদিন শিশু হাসপাতালে থেকে মারা যায় তখন।