বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মে-জুনে ঢাকায় বেশি কবর

  •    
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ১০:১০

সরকারি হিসাবে মৃত্যুর চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গেছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। কারণ, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার অপর্যাপ্ততায় রোগীরা শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছেন কি না- এ নিয়ে আলোচনা ছিল তুমুল।

শরতের এক সকালে আজিমপুর কবরস্থানের নীরবতায় কর্মীরা গল্প করছিলেন বসে। প্রতিদিন গড়ে ২৫টিরও বেশি কবর হয় রাজধানীর সবচেয়ে বড় এই সমাধিস্থলে। তবে সেদিন সকালে কেউ কবর দিতে আসেনি।

কবরস্থান ব্যবস্থাপনায় থাকা সহকারী মোহরার নুরুল হুদা জানালেন, করোনা আসার পর লকডাউন পরিস্থিতির তুলনায় এখন ব্যস্ততা কমেছে।

চলতি বছর মাসওয়ারী হিসাবে সবচেয়ে কম কবর হয়েছে জুলাই মাসে; ৬৭৬টি। আর সবচেয়ে বেশি মে মাসে এক হাজার ৩৯টি। 

এসব মাসে এত বেশি কবর কেন?

প্রথম প্রথম নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতেন নুরুল হুদা। পরে জানতে পারেন, যারা স্বজনকে নিয়ে এসেছিলেন সমাহিত করতে, তাদের বহুজনের আকাঙ্ক্ষা ছিল শেষ শয্যা হবে গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকা থেকে বাইরে যেতে বাধার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।

অবশ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কবর হয়েছে জুনে ৯১২টি। তখন যান চলাচলে বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল হয়ে যায়। এই মাসে বাড়তি কবর কেন, সে বিষয়ে ধারণা নেই আজিমপুর কবরস্থানের কর্মী নুরুল হুদার।

গত মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাবের এক মাস পর থেকে দেশে বাড়তে শুরু করে মৃত্যু। জেলাওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি জীবনহানি ঘটেছে ঢাকায়।

করোনাভাইরাস জনিত কারণে বা এই উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের কবর বা শেষকৃত্যের আলাদা স্থান ঠিক করেছে প্রশাসন।

তবে সরকারি হিসাবে মৃত্যুর চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গেছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল শুরু থেকেই। কারণ, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার অপর্যাপ্ততায় রোগীরা শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছেন কি না- এ নিয়ে আলোচনা ছিল তুমুল।

এর মধ্যে নগরীর কবরস্থানগুলোতে আগের বছরের তুলনায় বেশি সমাহিতের তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছর প্রথম আট মাসে এই সংখ্যাটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮.৭৬ শতাংশ বেশি।

নগরীর নয়টি কবরস্থানে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত কবর হয়েছে ১৩ হাজার ৪১০টি। এই সংখ্যাটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই হাজার ১১৯টি বেশি।

এই সময়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে, এমন ৯৩৬ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে আলাদা।

বাড়তি দুই হাজার কবর অশনাক্ত করোনা রোগীর কি না, এই বিষয়টি নিয়েও আছে আলোচনা।

তবে কবর ব্যবস্থাপনায় জড়িত একাধিক মোহরার বলছেন, আগের বছরের তুলনায় সাত থেকে ১০ শতাংশ বেশি কবর হয়ে থাকে প্রতি বছরই।

২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ৯.২ শতাংশ বেশি কবর খোঁড়া হয়েছিল।

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৬ শতাংশ বেশি কবর দেওয়া হয়েছে। পরের চার মাসে সেটা বেড়েছে ২৫.৭৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে একটি এক হাজার ৪৮৪টি।

এই বাড়তি কবরের সবচেয়ে বেশি হয়েছে মে এবং জুন মাসে।

মে মাসে বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি কবর খোঁড়া হয়েছে ৬০৮টি। শতকরা হিসেবে এটি ৩৯.৬৬ শতাংশ বেশি।

শতকরা হিসেবে কবর খোঁড়া আরও বাড়ে জুন মাসে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪১.৫২ শতাংশ বেশি কবর হয়েছে এই মাসে।

২০১৯ সালের জুন মাসে ঢাকায় কবর হয় এক হাজার ৩৯২টি, আর চলতি বছরের জুন মাসে হয় এক হাজার ৯৭০টি।

অর্থাৎ এই দুই মাস বাদ দিলে চলতি বছরের বাকি ছয় মাসে ঢাকায় কবর হয়েছে নয় হাজার ২৮৬টি। আগের বছর যা ছিল আট হাজার ৩৬৬টি। শতকরা হিসাবে যা ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

ঢাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্যের স্থান শ্মশানের চিত্রটাও মোটামোটি একই রকম।

সেখানেও চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি মানুষকে সৎকার করা হয়। কিন্তু পরের চার মাসে এই হার বেড়ে হয় ৫১. ৭৮ শতাংশ।

কবরস্থানের মতো শ্মশানেও মে এবং জুন মাসে আগের বছরের দুই মাসের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি মরদেহ এসেছে; শতকরা হিসাব ৬৩ শতাংশ।

মার্চে করোনার হানা হলেও মে এবং জুনে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে ক্রমেই। দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর বিষয়টি এই দুই মাসে ক্রমেই আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে থাকে।

দাফন এবং সৎকারের কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মী বলেছেন, ঢাকায় মৃত্যু হলেও মরদেহের একটি বড় অংশকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। তবে চলতি বছর করোনার কারণে ঢাকাতেই শেষ শয্যা হচ্ছে বেশি।

করোনার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে ঢাকা থেকে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ দেয় ‍পুলিশ, যা এক ছিল মাসের বেশি। তবে মের শেষ দিকে এই বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করে। যদিও পুরোপুরি যান চলাচল শুরু হতে আরও মাস খানেক সময় লেগে যায়।

আজিমপুর কবরস্থানের সহকারী মোহরার নুরুল হুদা বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ঢাকার বাইরে লাশ নিয়ে যেতে দেয়নি, যে কারণে ঢাকায় কবর বেশি হয়েছে।’

‘এমনও ঘটেছে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে শিমুলিয়া ঘাট থেকেও ফেরত এসেছে লাশবাহী গাড়ি। ঢাকায় কবরের বেশিরভাগ আজিমপুরেই হয়। তাই এখানে কবর দেওয়ার সংখ্যাটা একটু বেশি ছিল।’

পোস্তগোলা শ্মশানের মোহরার পলাশ চক্রবর্তীও জানান, মে-জুন মাসে মৃতের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সৎকার করতে হিমশিম খেয়েছেন তারা।

‘করোনার প্রভাব শিথিল হওয়ার সাথে সাথে শহরবাসী স্বজনের মরদেহ গ্রামে নেওয়া শুরু করেছে। ফলে শ্মশানে চাপ কমছে।’

ঢাকায় করোনায় যারা মারা যাচ্ছে, এখন তাদের কবর হচ্ছে রায়ের বাজার কবরস্থানে। শুরুতে খিলগাঁও তালতলায় ১৯১ জনের দাফন হয়েছিল। আর আজিমপুরে চার জনকে কবর দেওয়া হয়।

করোনায় সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৬০৮ জন।

পোস্তগোলা শ্মশানে আগস্ট মাস পর্যন্ত শেষকৃত্য হয়েছে ১৫০ জনের; যাদের মৃত্যু করোনায় হয়েছে বা করোনা উপসর্গ ছিল।

এ বিভাগের আরো খবর