কোভিড-১৯ প্রতিরোধে গ্লোব বায়োটেকের ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিনের (সম্ভাব্য টিকা) মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রোটকল তৈরিতে সময় লাগতে পারে অন্তত এক মাস।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরিতে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে বুধবার সমঝোতা স্মারক সই করেছে গ্লোব বায়োটেক। এটি তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক ছাড়পত্র পেতে আবেদন করা হবে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি)।
বিএমআরসি’র অনুমোদন পেলে আসবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ছাড়পত্রের প্রসঙ্গ। আর সেটি পেলে শুরু হবে মানবদেহে এই ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ।
অবশ্য এসব প্রক্রিয়ায় উৎরে যাওয়ার আশা করছেন গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, সব ঠিক থাকলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়ার বিষয়ে তারা শতভাগ আশাবাদী।
প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও বিকাশ শাখার ইনচার্জ আসিফ মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য আমরা আইসিডিডিআরবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। আইসিডিডিআরবি সিআরও প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক মাস পর একটি রিভিউ দেবে। তাদের রিভিউয়ের পরে বিএমআরসির নৈতিক ছাড়পত্র নেওয়ার আবেদন করা হবে।’
গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা এর আগে বিএমআরসির ছাড়পত্র পেতে একটি পিআরও প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু জানাননি আসিফ মাহমুদ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আইসিডিডিআরবির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেকের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে একটি সমঝোতা সই হয়েছে। এর আওতায় আমরা তাদের করোনা ভ্যাকসিনসহ উৎপাদিত অন্য ওষুধগুলো মূল্যায়নে আমরা কাজ করব। এরপরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় হয়ত নতুন করে চুক্তি হবে।’
ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিনের মূল্যায়নে এখনকার কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটা রিভিউ দেব, তারপর তারা (গ্লোব বায়োটেক) বিএমআরসিতে আবেদন করবে। ওখানে অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নামার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করা হবে। তারা অনুমোদন দিলে মানবদেহে টিকার পরীক্ষামূল প্রয়োগ শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:গ্লোবের টিকা কোন পথে
গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা ২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে আসার কথা প্রথম জানান। সেই সময়ে তারা একটি খরগোশের ওপর টিকা প্রয়োগ করে ফলাফল দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রাণীর ওপর পরীক্ষার (প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) পর একটি সম্ভাব্য টিকার কার্যকারিতা সাধারণত তিন ধাপে মানুষের দেহে পরীক্ষা করতে হয়। প্রতিটি ধাপে কয়েক মাস সময় লাগার কথা। এর যে কোনো পর্যায়ে জটিলতা দেখা দেখা দিলে বাতিল হতে পারে যে কোনো ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লোব বায়োটেক এখনও তাদের সম্ভাব্য টিকার গবেষণা পদ্ধতি সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেনি। এখনও বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অথচ মানবদেহে কোনো টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আগে বিএমআরসির নৈতিক ছাড়পত্র (ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স) নেয়া বাধ্যতামূলক।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, মানবদেহে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কয়েকটি ধাপ রয়েছে।
একেবারে শুরুতে অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এটি প্রয়োগের পর সময় নিয়ে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি সফল হলে দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন বয়স ও স্বাস্থ্যের স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর প্রয়োগ করা হয় টিকা। তৃতীয় ধাপে, টিকা প্রয়োগ করা হয় দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। কোনো কোনো সময় একই প্রক্রিয়ায় চতুর্থ ধাপেও পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন পড়ে।
এই ধাপগুলো কবে, কীভাবে অনুসরণ করা হবে- সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয়নি গ্লোব বায়োটেক। তবে তারা বলছে, তিন ধাপে তারা মোট তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট প্রয়োগ করতে চায়।
গ্লোব বায়োটেকের টিকার প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল নিয়ে একটি নিবন্ধ আন্তর্জাতিক প্রি-প্রিন্ট সার্ভার ‘বায়ো আর্কাইভে’ প্রকাশিত হয়েছে।
জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনো গবেষণার ফল দ্রুত তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এ ধরনের প্রি-প্রিন্ট সার্ভার ব্যবহার করে থাকেন।