বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসভর্তি ডাকাত, টের পাননি রবিউল

  •    
  • ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ১৯:৩২

পিবিআই জানিয়েছে, রাত ১২টার দিকে রবিউলের নম্বরে তার মা কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তার লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে।

রাজধানীর চিড়িয়াখানা সড়কের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী লস্কর রবিউল ইসলাম। বাবুর্চির খোঁজে সাভার গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রাত ১০টার দিকে সাভারের নবীনগরে বাসে ওঠেন। বাসটিতে তখন চালকসহ ২০ থেকে ২২ জন ছিলেন। রবিউল ভেবেছিলেন এরা সবাই যাত্রী। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিন/চারজন তাকে ঘিরে ধরেন। তারা রবিউলের টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে রবিউল বাধা দেন। তিনি হয়তো আশা করেছিলেন, অন্য যাত্রীরা প্রতিবাদ করবেন। তার পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কেউ তার পাশে দাঁড়াননি। কারণ বাসের চালক ও যাত্রীবেশী সবাই ছিলেন ডাকাত।

ডাকাদের দল রবিউলের টাকা-পয়সা তো নেয়ই, তার প্রাণও কেড়ে নেয়। ডাকাতিতে বাধা দেয়ায় ডাকাতদলের সর্দার তাকে বাসের ভেতরেই হত্যা করেন। পরে তার লাশটি ফেলে দেয়া হয় সাভারের বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে, নির্জন স্থানে। এ ঘটনা ঘটে গত ৫ অক্টোবর রাতে।

রবিউল হত্যায় পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এই তথ্য। ডাকাত দলটির প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লা। তাকেসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। অন্যরা হলেন শেখ হাফিজ, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. আমির হোসেন, মো. আল আমিন, জুয়েল, মো. নঈম, তপন ও নাজমুল। ইতিমধ্যে বসিরসহ ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বসির ২০ বছর ধরে ডাকাতি করছেন। আশুলিয়া থানায় করা একটি মামলায় ২৬ মাস কারা ভোগের পর তিন মাস আগে ছাড়া পান। এরপর আবার ডাকাতি শুরু করেন। একটি বাস কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নেন বসির। এরপর তার দলের চারজন সদস্যকে ডেকে পাঠান। তারা প্রত্যেকে আরও তিন চারজন করে নিয়ে আসেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। অনেক ‌যাত্রী দেখে সাধারণ যাত্রীরা বাসে ওঠেন। এরপর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সুবিধামতো জায়গায় যাত্রীকে নামিয়ে দেন।

গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া করেন ডাকাতদলের সর্দার বসির। এর পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লিখে তার দলবল নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হন বসির। নিজেদের কেউ চালক, কেউ চালকের সহকারী সেজে একজন দুজন করে বাসে যাত্রী তোলেন। এরপর সব কেড়ে নিয়ে নামিয়ে দেন। বাসটি ভাড়া নেয়ার পর বসির ও তার দলের সদস্যরা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এলাকায় গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের টাকা-পয়সা লুট করেন। এরপর দৌলতদিয়ায় রাতভর অবস্থান করেন। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ফেরার পথে রবিউল ইসলামকে বাসে তোলেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, রাত ১০ টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এরপর ডাকাতদলের কয়েকজন সদস্য রবিউলকে ঘিরে ধরেন। কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলেন। তিনি ধস্তাধস্তির চেষ্টা করেন। পরে ডাকাতদলের প্রধান বসির তার হাতে থাকা রেঞ্জ দিয়ে রবিউলের অণ্ডকোষে আঘাত করেন। এতে বাসের ভেতরেই রবিউলের মৃত্যু হয়। এরপর তার লাশ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যান ডাকাতদলের সদস্যরা।

বাসায় ফিরতে বিলম্ব হচ্ছিল দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের নম্বরে তার মা কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তার লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেন ডাকাতদলেরই এক সদস্য। এরপর রবিউলের মুঠোফোন সেটটি নর্দমায় ফেলে দেন।

পরদিন ৬ অক্টোবর রবিউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর অজ্ঞাতনামা হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে স্বজনেরা লাশটি রবিউলের বলে শনাক্ত করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সালে ইমরান ও তার দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত  মঙ্গলবার ডাকাতদলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই সালে ইমরান জানান, পরদিন বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বসির। তার দেয়া তথ্যেরভিত্তিতে সাভার, ধামরাই, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর