উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলমান নারী চিকিৎসক ডা. জোহরা বেগম কাজীর জন্মদিন আজ। এ উপলক্ষে বিশেষ ডুডল প্রকাশ করেছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল।
বাংলাদেশ থেকে গুগলে সার্চ পেজে ঢুকলেই চোখে পড়বে জোহরা কাজীকে নিয়ে করা ডুডলটি।
ডুডলে ডা. জোহরা বেগম কাজীর গলায় ঝুলানো রয়েছে স্টেথোস্কোপ। মাথার উপর আছে গাছের ছায়া। গায়ে জড়ানো হলুদ রঙের পোশাক।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণ করতে গুগলের হোমপেজে বিশেষ যে লোগো প্রদর্শন করে, সেটি ডুডল হিসেবে পরিচিত।
১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্যপ্রদেশের (বর্তমান ছত্রিশগড় রাজ্য) রাজনানগাঁও শহরে জন্মগ্রহণ করেন জোহরা কাজী।
উপমহাদেশে স্ত্রীরোগ নিয়ে সব কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে তিনিই প্রথম ধাত্রীবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ডা. জোহরা বেগমের ছোটবেলা কাটে বাবা ডা. কাজী আব্দুস সাত্তারের কর্মস্থল মহাত্মা গান্ধীর সেবাশ্রম সেবাগ্রামে।
রাজনানগাঁওয়ের ‘পুত্রিশালা’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু। পরে ‘বার্জিস মেমোরিয়াল’ নামের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে পাস করে ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম গার্লস কলেজে।
আলীগড়ের পর দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেনসে ভর্তি হন জোহরা। এই কলেজের প্রথম ব্যাচের একমাত্র মুসলমান ছাত্রী ছিলেন তিনি। সে হিসেবে তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান নারী এমবিবিএস ডিগ্রিধারী।
এমবিবিএসের পর চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যান জোহরা কাজী। সেখানে তিনি তখনকার দিনে চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ফেলো অফ দ্য রয়াল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকলোজিস্ট (এফআরসিওজি) নেন।
চিকিৎসক হিসেবে ইয়োথমাল উইমেন্স হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন জোহরা কাজী। এরপর বিলাসপুর সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন। এ ছাড়া তিনি অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৩ বছর চিকিৎসাসেবা দেন।
দেশভাগের পর জোহরা কাজী ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে যোগ দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অবৈতনিক কর্নেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। একই সময়ে বাংলাদেশ মেডিক্যালে অবৈতনিক অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন৷
২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর) প্রদান করে।