বাবা-মায়ের কোল পেল গাছের ডালে ব্যাগে ঝোলা শিশু ‘মহারাজ’। সঙ্গে পেল নতুন নাম ‘তিতাস’।
কোথা থেকে এসেছে, কার ঔরসে জন্ম জানা নেই। তবে এখন পরিচয় সে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের শিক্ষক শিখা রাণী চৌধুরী ও প্রকৌশলী বরুণ কুমার পালের সন্তান।
আদালতের আদেশ পেয়ে উদ্ধারের নয় দিন পর নতুন বাবা-মায়ের কোলে শিশুটিকে তুলে দিল প্রশাসন।
মঙ্গলবার বিকেলে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ তৈয়বুর রহমান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন মহারাজকে নতুন বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেন।
মা শিখা রাণী চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছর আগে নিজের সন্তান হারিয়েছি। আমার শূন্য বুকে ফিরে এসেছে আরেক সন্তান মহারাজ। আজ থেকে সে আমাদের কাছে ‘তিতাস’ হিসেবে বড় হবে।
‘তিতাসকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও মানবিক মানুষ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। দোয়া করবেন, ভগবান যেন আমাদের সেই সৌভাগ্য দান করেন।’
গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার কাঁকশিয়ালী নদীর তীরে গোলখালী শ্মশানের পাশে গাছে ঝুলছিল একটি ব্যাগ। কান্নার শব্দ শুনে ব্যাগটি নামিয়ে আনে স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরায় গাছের ডালে ব্যাগে ঝোলা শিশুটিকে দত্তক নিতে জমা পড়েছিল ২৯টি আবেদন। ফাইল ছবি।
ভেতরে নবজাতক দেখে পুলিশের সহায়তায় শিশুটিকে ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছেলে শিশুর নাম রাখা হয় মহারাজ।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯টি আবেদন জমা পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল তার সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে গঠন করেন পাঁচ সদস্যের ‘শিশুকল্যাণ বোর্ড’। শুরুতে বোর্ড কঠিন কিছু শর্ত দিলেও পরে কিছু শর্ত শিথিল করা হয়।
সোমবার সাতক্ষীরা শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান মহারাজের বিষয়ে আদেশ দেন।
বিচারক জানান, তালা উপজেলার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রাণী চৌধুরী ও তার স্বামী যশোরের সাগরদাঁড়ি কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বরুণ কুমার পাল পাবেন ছেলেটিকে।
শিশুটি এবং নতুন বাবা-মার জীবন এক দিন থেকে একই সূত্রে গাঁথা। পৃথিবীতে এসে বাবা-মায়ের আদর পায়নি শিশুটি। আবার শিক্ষক দম্পতি তাদের নিজের সন্তানকে আদর দিতে পারেননি। বছর তিনেক আগে মারা যায় তাদের উত্তরসূরী।