ভূমি সংক্রান্ত মামলার রায়, ডিক্রি ও আদেশ নিষ্পত্তির জন্য ল্যান্ড সার্ভে আপিল গঠন না করায় অসন্তোষ জানিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এ জন্য গত ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা ভূমিমন্ত্রী ও সচিবদের কাছে জনগণ কৈফিয়ত চাইতে পারে বলেও মন্তব্য এসেছে উচ্চ আদালত থেকে।
বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তার আগে ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপি নেতা এম শামসুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম হীরা, শামসুর রহমান শরীফ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে দায়িত্ব পালন করেছেন এ এফ হাসান আরিফ।
এদের মধ্যে শামসুল ইসলাম ও শামসুর রহমান শরীফ মারা গেছেন।
হাইকোর্ট বলেছে, ‘দীর্ঘ দিনে আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ না করে জনগণের সাথে অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং ক্ষমার অযোগ্য আচরণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।’
এক পৃষ্ঠার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে এত সময় লাগার কী কারণ, সে প্রশ্ন তুলে ৯ মাসের মধ্যে দেশের সংবিধান তৈরির উদাহরণও টেনেছে আদালত।
এ সংক্রান্ত একটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ এই মন্তব্য করে।
এ রায় মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছে। লিখেছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল । সম্মতি দিয়েছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।
রায়ে ভূমি সংক্রান্ত মামলার রায়, ডিক্রি ও আদেশ নিষ্পত্তির জন্য ৯০ দিনের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনে কড়া নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
আদেশ বাস্তবায়ন করে ভূমি সচিবকে হলফনামা দিতে হবে আদালতে।
বিচারক বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এদেশের মালিক জনগণকে তার আইনসম্মত প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
রায়ে বলা হয়, ‘সাধারণ জনগণ যাদের জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর এ ভোগান্তি ভোগ করল, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, দাঁড়াতে হবে জনগণের কাঠগড়ায়।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘গত ১৫ বছরেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আপিল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় লাখ লাখ জনগণ চরম সীমাহীন দুর্ভোগে নিমজ্জিত হয়।’
আদালত বলে, ‘জাতির পিতা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন সাধারণ জনগণকে হয়রানিমুক্ত বিচার প্রদানের জন্য। জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শাসনতন্ত্র তথা সংবিধানের মত গুরুত্বপূর্ণ আইন ৯ মাসে প্রণয়ন করেছেন।’
‘অথচ সেখানে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরেও একটি এক পাতার প্রজ্ঞাপন করতে না পারা ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং সচিবের চরম ব্যর্থতা।’
বিচারক বলেন, ‘সংবিধানের ৭ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এদেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই মালিককে তথা জনগণকে ২০০৪ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ হয়রানি করে চলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।’
বিচারক বলেছেন, ‘সরকার নিজের আইন নিজে যথাযথ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন এটাই সকলের কাম্য।’