বরগুনার জেলেদের ইলিশ মৌসুম এ বছর ভালো যায়নি। সাগরে কিছু মাছ পাওয়া গেলেও নদীতে তেমন মেলেনি। এরই মধ্যে কাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ ধরায় টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
পাথরঘাটা উপজেলার প্রান্তিক জেলে আবুল কালাম বলেন, ‘বিষখালী নদীতে মাছ শিকার করেই আমাদের জীবন চলে। এ বছর নদীতে মাছ পাওয়া যায়নি। এমন হয়েছে, দিনে একটি মাছও পাইনি। তার ওপর ঋণের বোঝায় কাঁধ ভারি হয়ে আছে। এমন অবস্থায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
রহিম নামের আরেক জেলে বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার শুধু ২০ কেজি চাল বরাদ্দ রেখেছে। এই সহায়তায় একটি পরিবার কতদিন চলতে পারে-এই প্রশ্ন রাখলাম সবার কাছে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের পাশাপাশি জেলেদের যথাযথ ভর্তুকি দেয়াও জরুরি। কারণ জেলেরা এমনিতেই ঋণের জালে জর্জরিত। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ঋণ আদায়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি; যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।’
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আরো বলেন, এখন এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে জেলেদের আবার ঋণ তুলতে হবে। আর এভাবেই জেলেরা ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। মৎস্য খাত থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও এই খাতের প্রতি সরকার উদাসীন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন নদী ও সাগরে ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে আমরা প্রস্তুতি শেষ করেছি। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জেলেদের সতর্ক করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া জেলা জুড়ে মাইকিং চলছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বরগুনার ৩৭ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেয়া হবে। আর যারা এই নিষেধাজ্ঞা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের নদীতে মাছ ধরতে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তিনি বলেন, প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশের সমন্বয়ে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।