পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামি শহীদ মোল্লা ধরা পড়েছেন ঢাকার সাভার উপজেলা থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, তিন বছর আগে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট রাতে উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে ওই হত্যার সময় ‘খোয়া যাওয়া’ একটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রোববার গ্রেফতার করা হয়েছে শহীদকে।
পুলিশ বলছে, ইজিবাইক চালক শহীদ বিয়ে করতে চেয়েছিলেন চাচাত বোন কাজলী আক্তারকে। ঘরে দুই স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকায় এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না কাজলীর মা পারভিন বেগম। এতে রাগে-ক্ষোভে ঘুমন্ত অবস্থায় চাচা দেলোয়ার মোল্লা (৬৫), চাচী পারভিন বেগম (৫৫) এবং চাচাত বোন কাজলী আক্তারকে (১৫) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। কাজলী মাথা অনেক দূরে ফেলে দেন। এরপর ঢাকায় পালিয়ে নাম বদলে দাড়ি রেখে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে করছিলেন সংসার।
তিন বছর বিভিন্ন অভিযান ও তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পটুয়াখালী পুলিশ রোববার রাতে সাভার থেকে শহীদকে গ্রেফতার করে।
সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মইনুল হাসান বলেন, গ্রেফতার শহীদ আলোচিত ওই ট্রিপল মার্ডার মামলার বাদি ইদ্রিস মোল্লার বড় ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ ঘটনার কারণ ও বিবরণ দিয়েছেন।
এসপি জানান, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট ভোরে ছৈলাবুনিয়া গ্রামের একটি নির্জন ঘরে দেলোয়ার মোল্লা, তার স্ত্রী পারভিন বেগম এবং পালিত কন্যা কাজলী আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। কুপিয়ে ও জবাই করে তাদের হত্যা করা হয়। কাজলীর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দূরে ফেলা দেয়া হয়।
ঘটনার সময় কাজলীর ব্যবহৃত নকিয়া-১২৮০ মডেলের মোবাইল ফোনটি খোয়া যায়। এ ঘটনায় নিহত দেলোয়ার মোল্লার বড় ভাই ইদ্রিস মোল্লা গলাচিপা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। কিছুদিন পরে দেলোয়ারের বোন পিয়ারা বেগম ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করে গলাচিপা আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত দুটি মামলা একত্রে তদন্ত করার আদেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এর সাড়ে তিন মাস পর বর্তমান পুলিশ সুপার পটুয়াখালীতে যোগ দেন। পরদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলাটির ‘নিবিড় ও গভীর’ তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন।
গত ৯ অক্টোবর ঢাকার পল্লবী থানার বাউনিয়া এলাকা থেকে মোহাম্মদ আবু রায়হানের কাছ থেকে কাজলী আক্তারের খোয়া যাওয়া নকিয়া-১২৮০ মডেলের ফোনটি উদ্ধার করে পটুয়াখালী পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মইনুল হাসান
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান জানান, শহীদ নামে এক নিকটাত্মীয় ২০১৭ সালের কোনো এক সময় তাকে ফোনটি ব্যবহারের জন্য দেন। পরে রায়হানের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে সাভার থেকে শহীদকে গ্রেফতার করা হয়।
এসপি মইনুল হাসান জানান, প্রায় তিন বছরের তদন্তে শহীদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ। তবে শহীদ সুচতুরভাবে হত্যার কোনো প্রমাণ রাখেননি। ঘটনার পর থেকে এলাকার সব আত্মীয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ঢাকায় নাম বদলে দাড়ি রেখে ইজিবাইক চালিয়ে জীবনযাপন শুরু করেন।
এক পর্যায়ে গলাচিপা থেকে প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ঢাকা নিয়ে যান। এ সময় পুরোন ফোনও বন্ধ করে দেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি। তাই দ্বিতীয় স্ত্রী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গলাচিপার থেকে বরিশালের গৌরনদীতে বাবার বাড়ি চলে যান।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ স্বীকার করেছেন, কাজলীকে বিয়ে করতে চাচী বাধা দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করেন।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন সোমবার রাতে নিউজবাংলাকে জানান, শহীদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এজন্য আর রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।
২০১৭ সালের ১ আগস্টের আলোচিত এই হত্যার আগে ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদের ছোটভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী শফিক মোল্লাকে (১৭) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবার করা হত্যা মামলাটি এখনও চলছে।
মামলায় বলা হয়, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নিজ বাড়িতে বাবা-মার সামনেই প্রতিপক্ষ মাইনুদ্দিন, মোশারেফ, মোকাররম, জহিরুল, আব্বাস, নাসির, খোকন ও তপন মিলে শফিককে হত্যা করেন।