যে ঔরসে জন্ম, তার কোল পায়নি মহারাজ। তবে তাকে বুকে তুলে নিতে অভাব ছিল না মানুষের। রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে হয়েছে এক শিক্ষক দম্পতিকে।
২৯টি আবেদন থেকে মহারাজের বাবা-মা বাছাই করতে বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছে প্রশাসনকে। পরে সিদ্ধান্ত এসেছে আদালত থেকে।
সোমবার সাতক্ষীরা শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এই আদেশ দেন।
আরও আছে: গাছের ডালে ‘মহারাজ’, দত্তক পেতে ২৯ আবেদন
মহারাজকে সন্তান করে নিয়েছেন তালা উপজেলার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রাণী চৌধুরী ও তার স্বামী যশোরের সাগরদাঁড়ি কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বরুণ কুমার পাল।
শিশুটি এবং নতুন বাবা-মার জীবন এক দিন থেকে একই সূত্রে গাঁথা। পৃথিবীতে এসে বাবা-মায়ের আদর পায়নি শিশুটি। আবার শিক্ষক দম্পতি তাদের নিজের সন্তানকে আদর দিতে পারেননি। বছর তিনেক আগে মারা যায় তাদের উত্তরসূরী।
গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার কাঁকশিয়ালী নদীর তীরে গোলখালী শ্মশানের পাশে গাছে ঝুলছিল একটি ব্যাগ। কান্নার শব্দ শুনে ব্যাগটি নামিয়ে আনে স্থানীয়রা।
ভেতরে নবজাতক দেখে পুলিশের সহায়তায় শিশুটিকে ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছেলে শিশুর নাম রাখা হয় মহারাজ।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯টি আবেদন জমা পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল তার সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে গঠন করেন পাঁচ সদস্যের ‘শিশুকল্যাণ বোর্ড’। শুরেুতে বোর্ড কঠিন কিছু শর্ত দিলেও কিছু শর্ত শিথিল করা হয় পরে।
দত্তক নিতে যেসব শর্ত দেয়া হয় শুরুতে
১. শিশুটির নামে ৩০ হাজার টাকা স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করতে হবে;
২. পৌরসভার বাইরে হলে ৫০ শতক কৃষি জমি আর ভেতরে মধ্যে হলে ১০ শতক জমি লিখে দিতে হবে;
৩. কমপক্ষে অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে হবে;
৪. সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে;
৫. সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
৬. যিনি দত্তক নেবেন তিনি আর কাউকে দত্তক নিতে পারবেন না;
৭. স্বামী ও স্ত্রী মিলে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে;
এবং
৮. শিশু কল্যাণ বোর্ড যে কোন সময় শর্ত আরোপ করতে পারবে।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘যেহেতু সদ্যজাত শিশুটিকে কালীগঞ্জের কাঁকশিয়ালী শ্মশানের কাছে একটি গাছে ব্যাগে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে সেহেতু শিশুটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের বলে অনুমিত হয়।’
এই বিবেচনায় মোট ২৯ টি আবেদনপত্র থেকে যাচাই বাছাই করে কেবলমাত্র আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে সামাজিক ধর্মীয় ও অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত শিশুটির মঙ্গলে ওই শিক্ষক দম্পতিকে দত্তক দেয়ার নির্দেশ দেন।
শিশুটি এখনও হাসপাতালে রয়েছে। তার বয়স সবে ১০ দিন।