সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কখনও ছিল না তার। জন্ম থেকেই অন্য রকম। তার ওপর শিকার হয়েছেন ধর্ষণের। এই নির্যাতনের শারীরিক-মানসিক ক্ষত সামলাতে পারছে না তার অবিকশিত মন।
খাগড়াছড়িতে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় দুই সপ্তাহ পরও ভুক্তভোগী মেয়েটি স্বাভাবিক হতে পারছে না। অচেনা মামুষ দেখলে ভয়ে কুঁকড়ে উঠছে। হঠাৎ ক্ষেপে উঠছে, মারতে আসছে পরিচিতদের।
মেয়েটির শারীরিক চিকিৎসা করছে তার পরিবার। তাকে এখন মানসিক চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাড়িটি খাগড়াছড়ি জেলা শহরের জিরো মাইল এলাকা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে; খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের একেবারে পাশে। পাকা দেয়ালে ঘেরা। সুনসান নীরবতা। রাত এলেই বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দেয় উদ্বেগ।
সম্প্রতি স্থানীয় নারী নেত্রী চিংমেপ্রু মারমা মেয়েটির খোঁজ খবর নিতে বাড়িতে যান। তিনি বলেন, ‘তার (মেয়েটির) চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। আমাদের দেখে চমকে উঠেছে। ভয়ে সরে যায় কাছ থেকে।’
বাড়িতে তিন জনের বসবাস। গৃহকর্তা প্যারালাইসিস রোগী। দুই জনের দেখাশোনার ভার গৃহিনীর একার কাঁধে।
বাড়ির জিনিসপত্র এখনো এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। ঘটনার পর গৃহিনীর কয়েকজন আত্মীয়স্বজন তাদের সহযোগিতা করতে সেই বাড়িতে এসেছেন।
মেয়েটির মা বলেন, ‘এমনিতেই সে (তরুণীটি) মানসিক প্রতিবন্ধী। এই ঘটনার পর আচরণ আরও অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। হঠাৎ সে কাছে থাকা যে কাউকে মারতে উদ্যত হয়। বেশিরভাগ সময় মনমরা ও ঝিমিয়ে থাকে।’
‘তাকে বাড়িতে রেখে এখনো তাকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে চট্টগ্রামে কোন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার।’
মেয়ের পাশাপাশি নিজেরাও ভীত বলে জানিয়েছেন মা। বলেন, ‘রাত নামলেই আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি। সেদিনের ভয়াবহ রাতের কথা আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে।’
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িটিতে ডাকাতি হয়েছিল। ডাকাতরা বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। প্রতিবন্ধী তরুণীকে তারা একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ মামলায়।
পরদিন তরুণীর মা হয়ে খাগড়াছড়ি থানায় অজ্ঞাত ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলা করে। পুলিশ এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
নিন্দার ঝড় উঠা এই ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে তাৎক্ষণিক। গ্রেফতার হয়েছে সাত জন। তারা হলেন: মো. আমিন, বেলাল হোসেন, ইকবাল হোসেন, আবদুল হালিম, শাহিন মিয়া, মো. অন্তর ও আবদুর রশিদ।
পুলিশ সুপার আবদুল আজিজ জানিয়েছেন, তাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে ঘটনায় নয় জন জড়িত। এরা সবাই পেশাদার অপরাধী। সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রশিদ বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।’