করোনা সংকটে আর্থিক জটিলতা কাটানো ও মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি চাকুরেদের মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার সাভার সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিট ও সংস্থাকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ পরামর্শ দেন।
আসছে শীতে করোনা মহামারি আবার ফিরে এলে তা মোকাবিলায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের সরকারি অর্থ খরচ করার বিষয়ে সর্বোচ্চ মিতব্যয়ী হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক যেটুকু আমাদের নেহায়েত প্রয়োজন, তার বেশি এখন কোনো পয়সা খরচ করা চলবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর এই সংকটময় সময়েও মানুষের কল্যাণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এবার ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি, যেটা দেওয়া খুব কঠিন ছিল।’
‘তবু আমরা দিয়েছি। তারপরও বলেছি যে অর্থ খরচের ব্যাপারে সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস যদি আবার ব্যাপক হারে দেখা দেয়, তাহলে আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে।’
তিনি বলেন ‘মানুষকে আবার আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে, ওষুধ কিনতে হবে, হয়তো আরও ডাক্তার, নার্স আমাদের লাগবে।’
‘সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। ঠিক যেটুকু আমাদের নেহায়েত প্রয়োজন, তার বেশি এখন কোনো পয়সা খরচ করা চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখেই সে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও আমরা বাজেট ঠিক রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনা বিস্তার শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এখনো করোনা ভাইরাসের প্রভাব আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরেকবার হয়তো এই করোনা ভাইরাসের প্রভাব বা প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে। কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে।’
‘আমাদের এখন থেকেই সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সেই সাথে আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যহত রাখতে হবে। সেই দিকে আমরা আহ্বান জানাব, আপনারা এই ব্যাপারে যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।’
খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কৃষিতে আমার নির্দেশনা ছিল প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। আমাদের যেন কোনো মতে খাদ্য সংকট দেখা না দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী একটা খাদ্যমন্দা দেখা দিচ্ছে।’
‘অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলেই আজকে সেই সমস্যাটা আমাদের দেখা দিচ্ছে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স নিয়োগ করেছে সরকার। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ২১টি প্যাকেজে প্রণোদনা, ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এই করোনা ভাইরাসেও আমাদের সেনাবাহিনী দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, তাদের রিলিফ বিতরণ করা, তাদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা, করোনা সম্পর্কে তাদের সচেতনতা সব ব্যাপারেই বিশেষ ভূমিকা আপনারা পালন করে যাচ্ছেন। সে জন্য আমি সেনাবাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
একুশ শতকের ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী সশস্ত্র বাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে গত সাড়ে ১১ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করায় সারা বিশ্বে আমাদের সামরিক বাহিনীর একটি উন্নত ও আধুনিক বাহিনীর মর্যাদা অর্জন সম্ভব হয়েছে।’