বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবু জাফরের ‘গরিবের স্কুল’

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৩৩

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদী ঘেঁষে স্কুলটির অবস্থান। পাশে গঙ্গারামপুর ও নহাটায় রয়েছে বড় দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বড় স্কুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মধ্যেও সপ্তগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষার্থী দুই শতাধিক। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ১২৫, বাকি সবাই ছেলে।

২০ বছর বেতন ছাড়াই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন আবু জাফর মৃধা। পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিতে ১৯৯৮ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন সপ্তগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বেতন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বিদ্যালয়টি ‘গরিবের স্কুল’ হিসাবে পরিচিত এলাকায়।

জাফর মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের সাধারণ অবকাঠামো ও জীর্ণদশার কারণে বিত্তশালীদের সন্তানেরা এখানে পড়তে চায় না। বেঞ্চ, টেবিল, শ্রেণিকক্ষ প্রায় সবই ভাঙাচোরা। এলাকার হৃদয়বান কিছু মানুষের সহযোগিতায় মাঝেমধ্যে এগুলা ঠিক হয়। নামেমাত্র বেতন দিতে হয় বলে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাই স্কুলটিতে পড়ে।‘

প্রধান শিক্ষক জাফর মৃধা বলেন, ‘এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ ভ্যান, রিকশা চালক অথবা নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান। তারা সারা মাসে কিছু চাল জমিয়ে রাখে। সেগুলো মাস শেষে বাজারে বিক্রি করে স্কুলের বেতন দেয়। এই অল্পকিছু টাকায় স্কুলটির পরিচালনা ব্যয়, ছয়জন শিক্ষককে সামান্য সম্মানি দেয়া হয়। এভাবেই চলছে ২০ বছর।‘

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদী ঘেঁষে স্কুলটির অবস্থান। পাশে গঙ্গারামপুর ও নহাটায় রয়েছে বড় দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বড় স্কুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মধ্যেও সপ্তগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষার্থী ২০০ এর বেশি। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ১২৫, বাকি সবাই ছেলে।

জয়রামপুর গ্রামটি স্বাধীনতার পর থেকেই শিক্ষায় অনেকটা পিছিয়ে। গ্রামের শিশুদের এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন থেকে জাফর মৃধা গড়ে তোলেন স্কুলটি। কিন্তু ২০ বছরেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা মেলেনি।

জাফর মৃধা বলেন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক। গত তিন বছরে পাসের হার ৯৩ শতাংশ। ২০০১ সালে একবার এমপিওভুক্তির বিষয়টি এগোলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এলাকায় বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষের বসবাস। তাই শক্ত কোনো সুপারিশও জোটেনি স্কুলটির জন্য।

বিনা বেতনে পড়িয়ে কীভাবে চলে নিজের পরিবার- এমন প্রশ্নে  প্রধান শিক্ষক বিষণ্ন কণ্ঠে বলেন, ‘কৃষি কাজ করে চলতে হয়। কিছু জমি আছে। চাষবাস করে কোনোরকমে ছোট পরিবার নিয়ে চলছি। দুই সন্তান নিয়ে বেশি কিছু চাহিদা নেই আমার। আমি চাই স্কুলটি এমপিওভুক্ত হোক। তাহলে পিছিয়ে পড়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভালোভাবে পড়তে পারবে। শিক্ষকেরা বেতন পাবেন। এলাকাটি আর পিছিয়ে থাকবে না।’

স্থানীয় জামাল মোল্লার মেয়ে পড়ে এই স্কুলে। পেশায় কৃষক জামাল বলেন, ‘খুব ভালো পড়ান স্যারেরা। কিন্তু উনারা নিজেরা খুব কষ্টে থাকেন। এটা আমাদের খুবই কষ্ট দেয়।’

আরেক অভিভাবক আকবর বিশ্বাস বলেন, গরিব বলে ছেলেকে অন্য স্কুলে পড়াতে পারেননি। তবে এখানে শিক্ষকেরা খুব ভালো পড়ান।

করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনার কিছু অর্থ পেয়েছিলেন জাফর মৃধা। তবে ৬ মাসের বেশি স্কুল বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে সব শিক্ষকের। কেউ হাল চাষ, কেউ দোকানের কর্মচারী হয়ে সংসার চালাচ্ছেন নিদারুণ আর্থিক কষ্টে।

জাফর মৃধা বলেন, আয়ের উৎস না থাকলে স্কুলটি চালানো কষ্ট হয়ে যাবে। ২০ বছর টেনে আনতে কষ্ট হয়েছে ঠিক। কিন্তু এই করোনাকালে ভার আর সহ্য করা যাচ্ছে না।

মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মাজেদ উর রহমান বলেন, ‘স্কুলটির ফল সন্তোষজনক। বেশকিছু শিক্ষার্থী আছে বলে আমি জানি। ওই এলাকায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। স্কুলটি তাদের সন্তানদের পাঠদানে সহায়তা করছে। এটা প্রশংসনীয়। এমপিওভুক্তির বিষয়ে তারা আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর