নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এটাই কাল হয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপার বনানী এলাকার ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধের। বিনা দোষে তাকে খাটতে হচ্ছে জেল।
চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় একই নামের একজনের কারাদণ্ডের আদেশ এসেছে। পুলিশ কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই না করে নির্দোষ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গেছেন।
জীবন সায়াহ্নে এসে প্রবীণ মানুষটির ওপর হওয়া এই অন্যায়ে ক্ষুব্ধ তার পরিবার। তারা জানান, হাবিবুর অসুস্থ, চোখে ভালো দেখেন না, শ্রবণ শক্তিও ভালো না। চলাচলের তেমন শক্তিও নেই। এই অবস্থায় তার যদি কিছু হয়ে যায়, সে ভয়ে আছেন তারা।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টিকে ‘সরল বিশ্বাসের’ ভুল বলেছেন। জানিয়েছেন, বৃদ্ধকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
বৃদ্ধের পরিবার বলছে, তারা ক্ষতিপূরণ চান।
এই হাবিবুর সেই হাবিবুর নন
মামলার বিবরণে দেখা যায়, পৌর শহরের মুজিবনগর রোডের হাবিবুর রহমান ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনি জামানত হিসেবে উত্তরা ব্যাংকের একটি চেক জমা দেন।
ঋণ পরিশোধ না করায় ব্র্যাক এই চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ব্যাংকে জমা দেয়। তবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
২০১৩ সালের ১৯ মে হাবিবুরের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্র্যাক। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাত জাহান ঝুনু আসামিকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান
রায়ের দিন হাবিবুর আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা।
এরপর গলাচিপা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন গত ৪ অক্টোবর দুপুরে বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। ওই দিনই তাকে পাঠানো হয় পটুয়াখালী কারাগারে।
বন্দি হাবিবুরের বাবার নাম নূর মোহাম্মাদ পণ্ডিত। তবে গলাচিপা ব্র্যাক অফিসের এরিয়া ম্যানেজার প্রগতি পরিতোষ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, দণ্ড হওয়া হাবিবুরের বাবার নাম মৃত নূর মোহাম্মাদ মাস্টার।
দণ্ডিত হাবিবুরের ‘নাহার গার্মেন্টস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানার পাশ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন আরেকটি ব্যবসা চালু করেন। কাপড়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে দেন মুদি-মনোহরি দোকান।
জেলে থাকা হাবিবুরের ছেলে আবু সালেহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা সদর রোডে কোনোদিন ব্যবসা করেননি আর আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। আমরা দুই ভাই ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করি। বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাই। তা দিয়ে তারা বসবাস করে। পুলিশকে বিষয়টি বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোনেনি।’
‘আমার বাবাকে কারাগারে পাঠানোর সংবাদ পেয়ে আমি ঢাকা থেকে চলে আসি এবং কাগজপত্র ওঠানোর পর দেখি আমার নিরপরাধী বাবাকে পুলিশ শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে সাজাপ্রাপ্ত অন্য লোকের পরিবর্তে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে’, ক্ষোভের সঙ্গে বলেন সালেহ।
গলাচিপা পৌরসভার ৯ নম্বর কাউন্সিলর শাহিন মিয়া বলেন, ‘খবরটি জানার পর আমি থানায় গিয়েছি এবং পুলিশকে বিষয়টি বলেছি। কিন্তু আমি যাওয়ার আগেই তারা ওই বৃদ্ধকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
হাবিবুরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক লোক এসে বলে ওসি স্যারে যেতে বলছে। আমি তাকে অনেক আকুতি করেছি, পরে জোর করে আমার স্বামীকে নিয়ে গেছে।’
জানতে চাইলে হাবিবুরকে গ্রেফতার করা এএসআই আল-আমিন বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।’
গলাচিপা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি আমরা সংশোধন করে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’