ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে ‘দুই মিনিটের’ ফাঁসি নয় বরং ৫০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড চান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’এর মানববন্ধনে এ অভিমত দেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে এর আগে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তিনি ফাঁসির বিপক্ষে। সাজা হওয়াটাই আসল এবং তা হতে হবে দ্রুত।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নারীর উপর পৈশাচিক নির্যাতন বন্ধ ও নারী ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদকারী বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত আট স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদে’ এ মানববন্ধন হয়।
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে দল বেঁধে ধর্ষণ আর ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে প্রাণদণ্ডের কথা বলা আছে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের পর গড়ে উঠা আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা ধর্ষণের মৃত্যুদণ্ডের সাজা করার দাবি জানাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে আইন সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, সাজা বাড়িয়ে সংশোধিত আইনের খসড়া সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে।
মানববন্ধনে ডা. জাফরুল্লাহ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ধর্ষণের মতো এতো বড় অপরাধ যারা করেছে, তাদের দুই মিনিটের ফাঁসি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে আপনার মেয়েকে যদি কেউ নিয়ে যেত তাহলে কি দুই মিনিটের ফাঁসি দিয়ে আপনার কান্না থামত? আমার কান্না তো থামত না।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার মঙ্গল চাই, আপনার সুশাসন চাই, আমরা চাই আপনার মেয়েটা ধর্ষিত না হয়। কিন্তু তা যে হবে না তার কোনো নিশ্চিয়তা নাই। আমি চাই, আমার মেয়েও যেন ধর্ষিতা না হয়।’
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আন্দোলরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ফাঁসির আন্দোলন না করে ৫০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দাবি জানান। সম্রাটের মতো কারাদণ্ড না। আজকে পিজি হাসপাতালে ১১ মাস তারা ভিআইপি কেবিনে কাটায়। এ ধরনের ছলনা নয়।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ড. জাফরুল্লাহ আরো বলেন, ‘প্রতিটি বাসে ও রেলপথে পুলিশ দেন। রাস্তাঘাটে পুলিশ দেন। প্রতিটি গার্লস স্কুলে মেয়েদের কারাতে শেখান। ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে খেলাধুলার পাশাপাশি শিক্ষার পরিবর্তন আনেন। নয়তো একদিন দুইদিনের আন্দোলনে সরকারের পতন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আপনারা যদি মনে করেন এ আন্দোলন থেমে যাবে, এটা ভুল। থামলেও আপনি শান্তি পাবেন না। বঙ্গবন্ধু কবরে বসে শান্তি পাবেন না। উনি নিশ্চয়ই দুঃখ পাচ্ছেন আজকের বাংলাদেশ দেখে।
‘আজকে আমাদের সবার দায়িত্ব আপনাকে অনুরোধ করা। আপনি রাস্তায় নেমে আসেন স্বচোক্ষে দেখেন। ডিজিটাল বাদ দিয়ে এখানে আসেন, আমাদের সামনে দাঁড়ান। তবেই জাতি বুঝবে আপনি এ জাতীয় সমস্যা সমাধান করতে চান।’
সংগঠনের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে ড. আসিফ নজরুল, ড. দিলারা চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধন শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করে ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’।