বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে আলোচিত সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুর হাতে পিস্তলসহ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে এমপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলু।
হাতে অস্ত্রসহ এমপি বাবলুর একটি ছবি শুক্রবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি সূত্রের দাবি, সংসদ সদস্য নিজেই তার ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে পরে সরিয়ে নেন। তবে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি নিউজবাংলা।
এ ঘটনার সমালোচনা করে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চপল সাহা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের কেনা অস্ত্র প্রদর্শন কতটা শোভনীয়? ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া ৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় হঠাৎ করেই রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয়া হয়।
ফলে তিনি হয়ে যান সংসদ সদস্য। তিনি একটি অস্ত্র কিনেছেন তার নিজের সুরক্ষার জন্য। এই অস্ত্রটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। একজন সংসদ সদস্যর জানা উচিত অস্ত্র প্রদর্শন করা আইনত অপরাধ। তাহলে তিনি কী...?’
‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’-এর বিধান উল্লেখ করে এমপি বাবলুর অস্ত্রহাতে ছবি পোস্টের সমালোচনা করেছেন আরেক সাংবাদিক রবিউল ইসলাম। এই নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২৫ (গ) ও ২৫ (ক) অনুযায়ী লাইসেন্স থাকা অস্ত্রও প্রদর্শন না করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বাবলু মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া ছবিটি অস্ত্র কেনার সময়ে তোলা। তবে তখন আমি অস্ত্রটি কিনতে পারি নাই।’
এমপির বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রটি তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিনেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে জানান, রেজাউল করিম বাবলুর নামে কয়েক মাস আগে একটি পিস্তলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে অস্ত্র হাতে ছবির বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। সনাতন চক্রবর্তী বলছেন, এভাবে ছবি দেয়ায় পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল হবে কিনা- সেটি ঠিক করবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
অন্যদিকে, বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, বৈধ অস্ত্র হলেও সেটি প্রকাশ্যে প্রদর্শন বেআইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনটি কতটা বা কীভাবে কার্যকর হবে তা খতিয়ে দেখা হবে। বিধিবহির্ভূত হলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
রেজাউল করিম বাবলু সংসদ সদস্য হওয়ার দুমাস পরেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সে সময় তিনি ৩৪ লাখ টাকার একটি গাড়ি কিনে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি।
অথচ নির্বাচনি হলফনামায় বাবুল বলেছিলেন, তার বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে।
ভাগ্যের ফেরে এমপি
বগুড়া-৭ আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে এ আসন গঠিত।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়।
পরে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলা শাখার মোরশেদ মিলটন। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়। এতে আসনটি বিএনপিশূন্য হয়ে যায়।
অন্যদিকে, নির্বাচনের সময় বগুড়া-৭ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে।
এ অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।