২০১১ সালের ২৮ জুন। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার পথে আবুধাবি বিমানবন্দরে নির্যাতন, হয়রানির মুখে পড়েন নাহিদ সুলতানা যুথী ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টি। ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের কারণে প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে ছিলেন বিমানবন্দরে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরতে বাধ্য হন দুজন।
সেই ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর যুথী ও বৃষ্টিকে এক কোটি টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।
হাইকোর্ট বলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা ইতিহাদকে রায়ের কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে যুথী ও বৃষ্টিকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হবে।
ইতিহাদ এয়ারকে কড়া সতর্ক করে আদালত বলেছে, ‘ভবিষ্যতে আর যেন জেন্ডার (লিঙ্গ) বা রং বিবেচনায় কোনো যাত্রীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করা না হয়।‘
রায়ে বলা হয়, দুই নারীকে আবুধাবি বিমানবন্দরে যে ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে তা অর্থদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। আদালত ‘নেগলিজেন্স’ ও ‘টর্ট আইন’-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের এ রায় দিয়েছে।
ফাইল ছবি
আবুধাবি বিমানবন্দরে হয়রানির ঘটনায় ইতিহাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালেই হাইকোর্ট রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবঅ নাহিদ সুলতানা যুথী ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টি।
ওই বছরের ১৪ জুলাই দুই বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না- জানাতে রুল দেয় আদালত। এ ছাড়া বিমানবন্দরে কী হয়েছে এবং ঘটনার পর কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- সে বিষয়ে তদন্ত করে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয় তখনকার পররাষ্ট্র সচিব ও বেসামরিক বিমান চলাচল সচিবকে।
পরে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দুই যাত্রীকে হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনায় তাদের কোনো দোষ নেই। বরং ওই যাত্রীরা উল্টো দুর্ব্যবহার করেছেন।
এ অবস্থায় হাইকোর্ট গত বছরের জানুয়ারিতে ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। তবে ইতিহাদ কর্তৃপক্ষ দাবি করে, সে সময়ের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট হয়ে গেছে।
রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে জানান, ভিডিও ফুটেজ না দেয়াতেই প্রমাণ হয় ঘটনার দায় ইতিহাদের। বিষয়টি তিনি আদালতেও তুলে ধরেন।
এরপর বিষয়টির ওপর আরো শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিলো হাইকোর্ট।
রায়ে সন্তুষ্ট রিটকারীরা
হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট নাহিদ সুলতানা যুথী ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টি। বর্তমানে একটি কন্সট্রাকশন ও রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বৃষ্টি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি একটি নজির হয়ে থাকবে। এর জন্য আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলাম।‘
তিনি জানান, আবুধাবিতে যাত্রাবিরতির সময় ইতিহাদ কর্তৃপক্ষ ভুল করে তার মায়ের পাসপোর্টে সিল দেয়নি। পরে বিমানে ওঠার সময় তাকে আটকে দেওয়া হয়। ইতিহাদ কর্তৃপক্ষ প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে তাদের রেখেই চলে যায়। পরে আবুধাবির পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের হস্তক্ষেপে তারা দেশে ফিরে আসেন।
রায়ের পর ইতিহাদের আইনজীবী মো. আজিজ উল্লাহ ইমন নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন তাদের কার্যক্রম নেই। তবে তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।