এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ধারণের যে পদ্ধতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশে তা এবারই প্রথম। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী এ নিয়ে চিন্তিত। অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বলছেন, যাদের আগের দুটি পরীক্ষা ভালো হয়নি, কিন্তু এবার ভালো প্রস্তুতি ছিল, তারা ভালো ফলাফলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।
অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে অনেক অভিভাবক মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিই যথাযথ সিদ্ধান্ত। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
তমাল মোস্তফা নামে একজন এইচএসসি পরিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, তার জেএসসি পরীক্ষার ফল ভালো থাকলেও এসএসসির ফল আশানুরূপ হয়নি। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তার আশা ছিলো কোনো না কোনোভাবে পরীক্ষা সরাসরি নেওয়া হবে।
‘দুই পরীক্ষার ফলাফল যদি গড় করা হয়, সেক্ষেত্রে আমার ফলাফল খারাপ আসবে। এটা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে কিনা সেটা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত এখন,’ বলেন তমাল।
তমালের মতো এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা এসএসসিতে আশানুরূপ ফল পাননি। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তারা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ইসতিয়াক শুভ নামে আরেক পরীক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম-কানুন শিথিল করা হবে কিনা, তিনি সেটা নিয়ে চিন্তিত।
তিনি বলেন, ‘এইচএসসির কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (সিজিপিএ) দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে। অনেক বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সিজিপিএ-এর মান বেঁধে দেওয়া হয়। আমার এসএসসি পরীক্ষার সিজিপিএ কম থাকায় আমি এইচএসসির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন আমাকে একটু বেশি চাপ নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।‘
শুভর বাবা রায়হানুল কবির একই কথা বলেন নিউজবাংলাকে। তিনি পরীক্ষা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও তার ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে এখন চিন্তিত। তিনি বলেন, এক বছর সময় চলে গেছে এখন অন্যান্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক নিয়ম শিথিল করা দরকার।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে। সেটা গুচ্ছ পদ্ধতিতে কীভাবে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনকার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর সেটার জন্য এখনও তিন মাস সময় রয়েছে।
এই মূল্যায়নের কারণে পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যারা চাকরিদাতা তারা এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। উচ্চশিক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেও বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
শিহাব নামে আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পরীক্ষা হবে কি হবে না এ নিয়ে তিনি এতদিন চাপের মধ্যে ছিলেন। এখন চাপমুক্ত বোধ করছেন।
পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও অনেক অভিভাবক শিক্ষাবর্ষ নিয়ে চিন্তিত।
বিজয়া রহমান খান তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী বোনের পরবর্তী পরীক্ষা প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত। তিনি নিউজ বাংলাকে বলেন, একটা দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বছরগুলাতে এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ততা থাকতো। এই শূন্যতা কিভাবে পূরণ হবে, তার কোনো নির্দেশনা এখনো জানা নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, 'করোনা সংকটের এই সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দেওয়া এটা একটা বড় ভাবনার বিষয় ছিল। পরীক্ষা সরাসরি না নিয়ে নতুন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এটা যৌক্তিক। এটার বিকল্প আমাদের হাতে এখন নেই।'
তবে তিনি মনে করেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণি-পরীক্ষাগুলোর ফলাফল, টেস্ট-প্রিটেস্ট পরীক্ষার ফলাফল যদি শিক্ষা বোর্ডে সংরক্ষিত থাকতো, তবে সেটা সমন্বয় করে মূল্যায়ন করা ও তার ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করা হলে তা আরো ভালো হতো।
তিনি বলেন, 'এখন যেটা হয়েছে, সেটাও যৌক্তিক। কারণ এগুলা পাবলিক পরীক্ষা। আর একটা পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল আগের দুইটার সাথে সমন্বয় করে দেওয়া হবে এটাই স্বাভাবিক।'