এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হচ্ছে না। করোনাভাইরাস মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার দুপুরে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
মন্ত্রী জানান, এবার পরীক্ষা সরাসরি না নিয়ে আলাদা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের আগের দুটি পরীক্ষার ফলের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত হবে ফল।
গত ২২ মার্চ এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত ছিল। পরে পরীক্ষার সূচি পিছিয়ে পয়লা এপ্রিল থেকে শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এবার এইচএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। আগে উত্তীর্ণ হয়ে আরো ভালো ফলের জন্য পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ২৭ জনের।
ব্রিফিংয়ে করোনা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, সবার নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্নভাবে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ নতুন। আগের দুটি পরীক্ষার ফলের গড় থেকে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।
মন্ত্রী জানান, এসএসসির পর এইচএসসিতে বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কীভাবে ফলের গড় ঠিক হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে।
বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হবে। একটা পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরামর্শক কমিটির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন।’
‘শিক্ষা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি থাকবেন এবং আমাদের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান সদস্য হিসেবে থাকবেন। যারা বিভাগ পরিবর্তন করেছেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
দীপু মনি বলেন, সরাসরি পরীক্ষা নেয়া বড় চ্যালেঞ্জ। সে পরিকল্পনা করাও বড় চ্যালেঞ্জ। ৩০ থেকে ৩২ দিন সময় লাগে।
তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার জন্য দুই হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্র রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা বড় ঝামেলা।
‘আমাদের প্রশ্ন প্যাকেট করা হয়েছে আগে থেকেই। নতুন করে করার সুযোগ নেই…অন্যান্য দেশে কী করেছে তা আমরা দেখছি। ভারতে আগেই শুরু করেছিল। পরে বাদ হয়ে গেছিল। হংকং, চীন সব স্থগিত করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব ধরনের বিপদ কাটিয়ে কীভাবে সর্বোচ্চ ভালো করা যায়, তা দেখছি। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি লক্ষ করেছি। কোনো শিক্ষার্থীর জীবন যাতে খারাপ দিকে না যায়, তা আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হকসহ সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধের সময় বাড়িয়ে আগামী ৩১ অক্টোবর করা হয়েছে।
এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল হয়েছে। নভেম্বরে এসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠদান টিভিতে সম্প্রচার করা হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে।