বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বাদী তার বাবা বরকত উল্লাহকে মঙ্গলবার সাত ঘণ্টা জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
এসময় তারা আবরারের ‘ছাত্র শিবির সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করেন। প্রায় সব প্রশ্নেই ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছেন তিনি; কখনো কখনো ছিলেন নিরব।
আলোচিত এ মামলায় সোমবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরাও করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একটানা তার জেরা চলার পর আদালত মুলতবি করা হয়। এক ঘণ্টা বিরতির পর দুপুর আড়াইটা থেকে জেরা শুরু হয়; চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।
বুধবার মামলার রেকর্র্ডিং কর্মকর্তা এসআই সোহরাব হোসেন ও সুরতহালের সাক্ষী এসআই দেলোয়ার হোসেন সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা।
বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার থাকতেন শেরে বাংলা হলে। গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরদিন তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন ।
পুলিশ যে ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় তাদের মধ্যে ২২ জন আছেন কারাগারে। বাকিদের পলাতক দেখিয়ে বিচার চলছে।
মঙ্গলবার মামলার বাদীকে জেরার সময় আসামিপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, আবরার ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন। উত্তরে ‘না’ বলেন তার বাবা।
আরেক আইনজীবী বলেন, বুয়েটের ছাত্র শিবিরের কর্মীদের ইন্ধনে ছাত্রলীগকর্মীদের ওপর দায় চাপিয়ে মামলার এজাহার করা হয়েছে। এজাহার দাখিলের সময় শিবির সদস্যদের দিয়ে বাদী পরিবেষ্টিত ছিলেন।
‘যে দুই জন ছাত্র অবরারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তাদেরই আপনি আসামি করেছেন। এর মধ্যে এসএম মাহমুদ সেতুর বাড়ি কুষ্টিয়ায় আপনার বাড়ির কাছেই। সেতুর মায়ের নাম আপনি কীভাবে জানলেন?’
এ প্রশ্নের উত্তরে আবরারের বাবা চুপ থাকেন।
আবরারের লাশ শিবিরের কয়েকজন ক্যাডার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে গ্রহণ করে বাদীর শ্যালক আব্দুল কাদেরকে বুঝিয়ে দেন বলে দাবি করেন এক আইনজীবী। তখন বাদী বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না। আমি মর্গে ঢুকি নাই; বাইরে ছিলাম। আমি আগে থানায় গেছি। পরে ঢাকা মেডিক্যালে যাই।’
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন, ‘আপনি এমনভাবে শিবির কর্মীদের দিয়ে পরিবেষ্টিত ছিলেন যে ইচ্ছা থাকলেও হত্যার বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন নাই। আপনি প্রক্টর কিংবা ভাইস চ্যন্সেলর- কারো কাছে ছেলে হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চান নাই।’
এ প্রসঙ্গে আবরারের বাবা বলেন, ‘হ্যাঁ। জানতে চাইনি।’
আবরারের শরীরের কোথায় কোথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল- আসামিপক্ষের এমন প্রশ্নে চুপ ছিলেন তিনি।
এক আইনজীবী বলেন, ‘বুয়েট কর্তৃপক্ষ আবরার হত্যার দায় এড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। ঘটনাটি বুয়েট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঘটেছে। যেহেতু আপনি শিবিরের সদস্যদের দিয়ে পরিবৃত ছিলেন সে কারণে আপনি আবরার হত্যার দায় আপনার অজান্তেই আসামিদের উপর চাপিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে বাদী বলেন, এ কথা সত্য নয়।
মামলায় আপনি নিজে বাদী না বুয়েট থেকে মামলা করা হয়- এ প্রসঙ্গে বাদী চুপ থাকলে বুয়েটের নিয়োজিত বাদী এহসানুল হক সমাজী প্রতিবাদ করেন।
বাদীকে আসামিপক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, ‘কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর বুয়েটের হলের সিকিউরিটি গার্ড ও ক্যান্টিন বয়ের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল কিনা? কে কে আপনার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়? এজাহারে কি তার উল্লেখ আছে? ২০১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা কারা ছিল জানেন কি?’
এসব প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ বলেন আবরারের বাবা।