দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র গো-খাদ্য সংকট। যেটুকু মিলছে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে গৃহস্থদের। জেলার বাইরে থেকে খড় নিয়ে আসায় ব্যবসায়ীদের তা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ।
ভারী বর্ষণ আর মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দফার বন্যার কারণে জেলার কৃষিজমি এবং চারণভূমি পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে করে ঘাস-খড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
পানি কমতে শুরু করলেও গবাদি পশুর খাদ্য না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষজনকে। নিম্ন আয়ের লোকজন নিজেদের খাবারের পাশাপাশি তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন প্রধান সম্পদ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বন্যার আগে জেলায় একশ খড়ের আটির দাম ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্তমানে তার ৮/৯ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে খড়।
খড়ের দাম বেশি হওয়ায় সামর্থ্য না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়েই গরু-মহিষের খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বাঁশ-গাছের পাতাসহ কচুরিপানা।
এতে করে গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে গাভির দুধ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
এবার বন্যায় জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার ৫ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
সরকারি হিসাবে, জেলায় আট লাখ ৪৭হাজার ১৪৬টি গরু, তিন হাজার ৪৯৫টি মহিষ, চার লাখ ১২হাজার ৪৮৫টি ছাগল, এক লাখ ছয় হাজার ২৩৩টি ভেড়া এবং দুই হাজার ৪৯৯টি ঘোড়া রয়েছে।
এরমধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে ৬০ হাজার ১৬টি গরু, ৭৩২টি মহিষ, ৩৮ হাজার ৮১৪টি ছাগল, ছয় হাজার ১০৭টি ভেড়া, এক লাখ ৬০ হাজার ৩৭টি মুরগি এবং ৪৮ হাজার ৭৭৩টি হাঁস। নষ্ট হয়েছে ১৯৩ টন খড় ও ৪৯৫ টন কাঁচা ঘাস।
জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার গো-খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে জাতিসংঘের এফএও-র পক্ষ থেকে সদরের ৯৩১টি এবং চিলমারীর ২ হাজার ৯১৯টি পরিবারকে ৭৫ কেজি করে পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি।