বিমানের টিকিটের দাবিতে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের চার ঘণ্টার বিক্ষোভের পর টিকিট দেয়ার নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে সৌদি এয়ারলাইনস। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার ভিসার মেয়াদ আগে শেষ হবে, তিনি আগে পাবেন টিকিট।
রোববারও কারওয়ানবাজারে সৌদি বিমান সংস্থা সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার সৌদি প্রবাসী। সেখানে বেশ হাঙ্গামার পর এই ঘোষণা আসে বিমান সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
সৌদি এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকিটপ্রত্যাশীদের ফরম দেয়া হবে। এতে ভিসার মেয়াদ উল্লেখ করে পাসপোর্ট ও ফোন নম্বর লিখে জমা দিলে টিকিটের ব্যবস্থা হবে।
আর কবে টিকিট মিলবে, সেটি মোবাইল ফোনে ম্যাসেজে জানানো হবে।
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছেন প্রায় ৮০ হাজার কর্মী। সাত মাস পর কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ এলেও ফ্লাইটের অভাবে ফিরে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে প্রবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ২৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশের শ্রমিকদের আকামা আরও ২৪ দিন বৈধ থাকবে। প্রয়োজনে আরও বাড়বে।
পরদিন থেকে সৌদি এয়ারলাইনস টিকিট দেয়া শুরু করে। সর্বশেষ ১ অক্টোবর তিনশ টোকেনধারীদের টিকিট দেয় তারা।
রোববার ৪৫০ জনকে টোকেন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে হাজির হয় ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
টোকেন না পেয়ে বিক্ষোভকারীরা হট্টগোল করে সোনারগাঁও হোটেলের দেয়াল টপকে ও ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত, বিক্ষোভে নগরীর অন্যতম প্রধান সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়, চারপাশে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সৌদি এয়ারলাইনস জানায় নতুন সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদশে কান্ট্রি ম্যানেজার জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসীরা যে ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন সেগুলো যাচাইবাছাই করে আমরা দেড় হাজার টোকেন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভিসার মেয়াদ যাদের আগে শেষ হয়েছে, সেই সিরিয়াল অনুযায়ী আমরা এই টোকেন দেব।’
‘কার টিকিট দেয়ার তারিখ কবে, তা আমরা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দেব। সে পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’
এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছাড়ে। তবে খুব বেশি আস্থা আছে এমন না।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সুলতানা বেগম বলেন, ‘তারা কথা দিইয়া কথা রাহে না, তাও বিশ্বাস কইরে বাড়ি ফিরতাছি। তাগো ম্যাসেজের অপেক্ষায় থাহাম। দেহি আল্লাহয় নসিবে কী রাখছে।‘
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সাইফুল কবির বলেন, ‘আমি তাদের কথায় ভরসা রাখি না।… সবাই জানে, তারা নাটক করছে।’
কুমিল্লা থেকে আসা দিদার মিয়া বলেন, ‘ন্যায্য দাবি করতে এসে লাঠির বাড়ি খাইতে হইছে।’
সাউদিয়ার সেলস ম্যানেজার ওমর খৈয়াম বলেন, ‘৪৫০ জনকে টোকেন দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলাম। কিন্তু হাজার দশেক মানুষ ভিড় জমায়। আমরা অপ্রস্তুত হয়ে টোকেন দেয়া বন্ধ করে দেই।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আর ফারুক বলেন, ‘প্রবাসীরা সোনারগাঁও হোটেলের গেট ভাঙচুর করে, তখন বাধ্য হয়েই পুলিশকে তা সামাল দিতে ব্যবস্থা নিতে হয়।’