বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘লাশ’ ফিরলেও রেহাই নেই খলিল মাঝিদের

  • মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ   
  • ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:২৮

নির্দোষ হলেও মামলা থেকে মুক্তি মিলছে না কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তিন আসামির। হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। জব্দ করা নৌকা ফেরত না পেয়ে আয় বন্ধ একজনের, চলছেন ঋণ করে।

যাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, সেই কিশোরী ঘরে ফিরেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই হয়েছে মামলা। তবু ‘প্রাণ বাঁচাতে’ আদালতে হত্যার স্বীকারোক্তি দেয়া তিন জনের হয়রানির শেষ নেই।

‘খুন হওয়া’ কিশোরী ঘরে ফেরার পর লাভের লাভ একটা হয়েছে, তারা যে নির্দোষ, তা প্রমাণ হয়েছে সামাজিকভাবে। তবে আইনের চোখে তারা এখনো নির্দোষ নন। আদালতে এখনও হাজিরা দিতে হচ্ছে তিন জনকে। আইনজীবীর পেছনে ঢালতে হচ্ছে টাকা।

গত ৪ জুলাই একটি কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ এনে মামলার পর রকিব, খলিলুর রহমান (নৌকার মাঝি) ও আব্দুল্লাহ নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।

তারা আদালতে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেন খলিল ও আবদুল্লাহ। তবে গত ২৩ আগস্ট কিশোরীটিকে ফিরে আসে পরিবারে।

বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। জামিনে মুক্তি পেয়ে যুবকরা জানান, তাদেরকে রিমান্ডে পেটানো হয়েছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতেই পুলিশের শিখিয়ে দেয়া কথা আদালতে বলেন।

ঘটনাটি ফাঁস হলে তিন জন জামিন পান। তবে মামলা থেকে মুক্তি মেলেনি।

ভুক্তভোগী তিন জনের প্রশ্ন, আদালতে নির্দোষ প্রমাণে আর কত দিন লাগবে তাদের। বিনা দোষে কারাভোগে আর নির্যাতন সহ্য করার ক্ষতিপূরণ কে দেবে।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি দিন কামাই দিন খাই। অন্য মানুষের কাছ থেকে দেনা কইরা আমার বউ আমারে জামিনে ছাড়ায় আনছে। আমি এই মামলা থেকে খালাস চাই।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানাচ্ছেন, পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার আগ পর্যন্ত আদালতে যেতে হবে তিন জনকে। পুলিশ বলছে, এখনও তদন্ত চালাছে। কবে প্রতিবেদন দেয়া হবে, সেটা বলা সম্ভব না।

ভুক্তভোগী তিন জনের আইনজীবী রোকন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর মামলার শুনানি আছে। ওই দিনও তাদেরকে (তিন জনকে) আদালতে হাজির থাকতে হবে।’

সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু মামলা প্রক্রিয়াধীন সেহেতু বিচারের মাধ্যমে আদালত নির্ণয় করবেন কে দোষী কে নির্দোষ।’

আইনজীবীরা জানান, পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে আদালত আদেশ দেবেন।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার পর্যন্ত তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হবে।

মেয়েটি ফিরে আসার পর প্রতিবেদন দিতে কেন দেরি হচ্ছে- এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত এটা এক চলমান প্রক্রিয়া। কবে জমা দেব, এটা এখন আপনাকে আর বলতে পারব না।’

আয়ের সম্বল আটকা, ঋণে জর্জরিত খলিল মাঝি

ভুক্তভোগীদের একজন খলিল মাঝির বিপত্তি আরও বেশি। তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন নৌকাটি জব্দ করে রেখেছে পুলিশ।

নৌকা নেই, তাই জামিনে মুক্তির পর থেকে বসে আছেন, চলছেন ধার দেনা করে।

খলিল মাঝি বলেন, ‘যেদিন পুলিশ ধইরা নিছিল, সেই থেইক্যা নৌকা পুলিশের কাছে। নৌকা নাই তাই চাই চালাতে পারতাছি না। বড় মাইয়াডা প্রতিবন্ধী। আরও দুইডা সন্তান আছে। ওদের নিয়া অনেক কষ্ট করতে হইছে।’

‘বউ কিস্তিতে সাত হাজার টাকা আনছে। আর শ্বশুরবাড়ি লোকজন মাঝে মাঝে সাহায্য করতাছে। তাই দিয়া কোন রকম ভাই খাইতাছি’-নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন খলিল।

‘আমার নৌকা না দিলে তো না খাইয়া মইরা যাব। আমার নৌকা ফিরত দিতে কন ভাই’- আকুতি ঝরে পড়ে খলিল মাঝির কণ্ঠে।

তবে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম দেখাচ্ছেন আইনি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘নৌকা নিতে হলে তাকে (খলিল মাঝি) আদালতে আবেদন করতে হবে এবং আদালত থেকেই নিতে হবে।’

নির্দোষ হয়েও যে কারণে জবানবন্দি

নারায়ণগঞ্জের চারারগোপ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর ৫ নং খেয়া ঘাটে নৌকা চালাতেন খলিল মাঝি। জানান, তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া আবদুল্লাহ তাকে দেখিয়েছিলেন পুলিশকে।

খলিল মাঝি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৫ নং খেয়া ঘাট থেইকা আমারেসহ ছয়টা নৌকার মাঝিরে ধইরা নিয়ে গেছে কিছু জিগাইব। ফাসটে আমারে ওই ছেলেটা দেখায় দিসে (আবদুল্লাহ)। আমি বললাম যে স্যার আমি ওদের চিনি না, আগে কখেনো দেখি নাই, ও আমার নৌকা দিয়া যায় না।’

‘আমারে কয় ওয় দেখায় দিছে, তুই আছিলি- এই কথা কইয়া আমারে নিয়া আলাদা একটা কাসটুডিতে রাখল। রাখার পর রাতের দুইটার দিকে হাতে পায়ে বাইনধা একটা লাঠি দিয়া উপরে ঝুলায়া মাথাটা ও চেহারাটার মধ্যে ভিজা গামছা দিয়া ডাইকা নাকে মুখে পানি ঢালছে’- থানায় নির্যাতনের বর্ণনা এভাবেই দেন খলিল।

কেন স্বীকারোক্তি দিলেন- জানতে চাইলে খলিল বলেন, ‘পায়ের তালুতে তালুতে বাইরাইছে। কইছে যে পর্যন্ত স্বীকার না আসবি সেই পর্যন্ত মারমু। জান বাঁচানোর লেইগা স্বীকারোক্তি দিছি।

‘রবিবার কোর্টে চালান করার সময় বলতাছে এনে যা যা বলছস, কোর্টে গিয়া তা তা বলবি। আর নাইলে আবার রিমান্ডে নিয়া আসমু না, গুলি কইরা দিমু- এমন ভয় দেখাইছে।’

‘তখন আমি বুঝি নাই, আইনের বাও কেমনে, ১৬৪ কী-এইডা কিছুই বুঝি না। হেরা আমারে যা ভয় দেখাইছে আমি তাই কইছি।’

খলিল মাঝিকে কেন দেখিয়েছিলেন আবদুল্লাহ? তিনিও জানান, নির্যাতন থেকে বাঁচতে।

নিউজবাংলাকে আবদুল্লাহ বলেন, বাসা থেকে ধরে এনে হাত, পা বেঁধে উল্টো করে গরম পানি ঢেলে থানার একটি কক্ষে তাকে পেটান দারোগা।

‘এস আই শামীম মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছিলো স্বীকার কর, নয়তো গুলি করব। পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছি’-বলেন আবদুল্লাহ।

আদালতে নেয়ার সময়ও ব্যাপক চাপ তৈরি করা হয় আবদুল্লাহদের ওপর। তিনি বলেন, ‘আদালতে নেয়ার সময় কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ ভ্যানে বলা হয়েছিল, থানায় যা বলেছিস হাকিমের সামনে তাই বলবি।’

খলিলকে থানায় পেটানোর অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরির্দশক (বরখাস্ত) শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন না করার কথা বলে তিনি টাকা আদায় করেছিলেন। বিষয়টি ফাঁস হলে তিনি সে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার। এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে।

সেই কিশোরীর স্বামী আটক

গত ২৩ আগস্ট বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে কিশোরীটি। জানায়, এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর রেললাইন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল তারা।

ওই কিশোরী যাকে বিয়ে করেছিল, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এখন।

এ বিভাগের আরো খবর