বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক অসহায় শিশুর দত্তক ও প্রতিহিংসার কাহিনি

  • রাফসান জানি, ঢাকা   
  • ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:৩৫

অচেনা মায়ের মরদেহের পাশে কাঁদছে শিশু। দেখে মায়া হয় রিনা বেগমের। শিশুটির ‘নতুন মা’ হয়ে উঠেন তিনি। নেন দত্তক।

এর জেরে রিনা হারিয়েছেন দেড় যুগ ধরে বড় করা নিজের সন্তানকে। খুন করা হয়েছে ১৮ বছর বয়সী মূসাকে।

তিন বছরের তদন্ত শেষে রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধান আসামি কবিরসহ তিন জনকে।

সিআইডি বলছে, স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে রিনা বেগমের বিরোধ ছিল। এই শিশুকে নিয়ে তৈরি হয় নতুন বিরোধ। আর এর জেরে প্রতিশোধ নিতে রিনার সন্তানকে খুন করা হয়।

রিনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কবিররা (প্রধান আসামি) চাইছিল বাচ্চাডারে তাদের কাছে দিয়া দেই। তারা নাকি অন্য কাউরে দিবে। আমি দেই নাই। কেন দিব? থানা-কোর্ট কইরা বাচ্চাডারে নিয়া আসছি। ওরা এদিকে অনেক ঝামেলা করছে।’

রিনা ছয় সন্তানের জননী। সিআইডি জানায়, আসামিরা প্রথমে রিনার পঞ্চম সন্তানকে খুন করতে চেয়েছিল। টের পেয়ে রিনা তাকে বাঁচাতে পাঠিয়ে দেন কক্সবাজার। তাকে না পেয়ে ষষ্ঠ সন্তান মূসাকে গলা কেটে হত্যা করে।  

ঘটনার সূত্রপাত

২০১৩ সালের ১০ জুলাই নরসিংদীর বেলাবোর খামারের চর এলাকায় এক নারীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার হয়। পাশে কাঁদছিল এক বছর বয়সী কন্যাশিশু।

বাড়ির পাশেই এই ঘটনা দেখে ছুটে যান রিনা, যিনি স্থানীয় নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। আদালতে আবেদন করে মেয়েটির অভিভাবকত্ব পান।

মরদেহ উদ্ধার ঘটনায় খামারের চর গ্রামের কবির ও তার ভাইসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, কবিরদের ধারণা ছিল, রিনা পুলিশ দিয়ে তাদের হয়রানি করাচ্ছেন। এ নিয়ে তাকে কয়েক দফা হুমকি দেয়া হয়।

তদন্তে যা জানা গেল

শনিবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

ছেলে হত্যার ঘটনায় কবিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বেলাব থানায় মামলা করেন রিনা। থানা পুলিশের তদন্তের সময়ে সদরদপ্তরের নির্দেশে দায়িত্ব পায় নরসিংদী পিবিআই।

কবিরসহ তিনজন এবং এজাহারের বাইরে আরও দুইজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা রুবেল শেখ।

নারাজি দেন রিনা বেগম। পরে আদালতের নির্দেশে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

রিনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমারে না জানায়া রিপোর্ট দিছিল। আমার পছন্দ হয় নাই। এই জন্য নারাজি দিছি।’

সিআইডি ঢাকা মহানগরের ডিআইজি মাঈনুল হাসান বলেন, কবির মিয়ার সঙ্গে রিনার পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে রিনার ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এই মামলার এক আসামি বাচ্চু থাকতেন রিনার বাসায়। ঘুমাতেন মূসার সঙ্গে। রিনার সন্তানকে ডেকে আনতে বাচ্চুকে কাজে লাগায় কবিররা।

মাঈনুল জানান, ফরিদকে ডেকে নিয়ে আসতে বাচ্চুকে বলেন কবির। বাচ্চু জানান, ফরিদ কক্সবাজারে। তখন ফরিদের যেকোনো ভাইকে ডেকে আনতে বলেন কবির।

প্রথমে রাজি না হলেও টাকা দেয়ার পর রাজি হন বাচ্চু। ২০১৭ সালে ১২ অক্টোবর রাত দুইটার দিকে মূসাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হন তিনি।

তখন শিপন ও কবির মূসাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা বেঁধে কুকুর মারা স্কুলের পিছনে নিয়ে যান। সেখানে শফিক, মিলন, তুহিন ও শিপন গলা কেটে হত্যা করে।

তিন বছর পর ধরা কবির

গত শুক্রবার প্রধান আসামি কবির মিয়াকে গাজীপুরের মাওনা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি জানায়, মূসাকে হত্যার পর কবির গাজীপুরের শ্রীপুরে আত্মগোপন করেন। নাম পাল্টে নিজের পরিচয় দেন শ্যামল। কাজ শুরু করেন ট্রাক চালক হিসেবে।

কবিরের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

নরসিংদী সিআইডির পরিদর্শক নুরুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, ‘কবির ছাড়া আরও দুজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। এদের একজন কারাগারে অপরজন জামিনে।’

সেই নারীর পরিচয় অজানা

যে নারীর হাত পা বাঁধা মরদেহ পাওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, তাকে কারা কীভাবে হত্যা করেছে, সেটা বের করা যায়নি। এ বিষয়ে প্রথমে বেলাব থানা পুলিশ ও পরে পিবিআই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর