বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চুলা জ্বলছে না গাইবান্ধার অনেক বাড়িতে

  • পিয়ারুল ইসলাম, গাইবান্ধা   
  • ৩ অক্টোবর, ২০২০ ২১:৩৭

‘অতি কষ্টে আছি বাবা। হামার (আমাদের) নাই কোনো জমিজমা, নাই থাকার আশ্রয়। না আনদিছি (রেধেঁছি ) ভাত, না খাচি (খেয়েছি) ভাত।  চকির (খাট) কানিত (কিনারা) বসি (বসা) রাতটা পরবাস করমো  (করবো) সে জাগাটাও হামার নাই বাবা। ঘরে পানি উঠে সে চকিও তলি গেছে। এখন থাকমো (থাকবো) কোনটে (কোথায়) রে বাবা!

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী গ্রামের জমিলা বেগম (৪৫) এভাবেই বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্দশার কথা এই প্রতিবেদকের কাছে বর্ণনা করছিলেন। 

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে করতোয়া বাঁধের টোংরারদহ ও সুলতানপুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ধসের ঘটনায় কিশোরগাড়ীসহ ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে জমিলা বেগমরে ঘর অর্ধেক তলিয়ে গেছে। খাটের ওপর বসে কোনোরকমে রাত কাটালেও গত দুইদিন চুলা জ্বলেনি। তার মতো এভাবে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ।

একই গ্রামের নয়নতারা বেওয়া বলেন, 'বাড়ি-ঘর তলি গেছে। গরু-বাছুর সুদ্দেই (সব) ভাসি যাচ্ছে। বাড়িত খাবার নাই, কি খাই? হামরা (আমরা) তো মরে যাচ্ছি। থাকার আশ্রয় খুঁজতে টামটোকলা (নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল) নিয়ে বাড়ি ছাড়ি (ছেড়ে) যাচ্ছি। দেখি থাকার জায়গা কোনটে (কোথায়) পাই।'

কাশিয়াবাড়ী গ্রামের মুনছুর প্রামাণিক গত তিনদিন ধরে স্থানীয় কিশোরগাড়ী বাজারে পরিবার নিয়ে দোকানের বারান্দায় রাত যাপন করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতি বছর এখানকার বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি প্রবেশ করে। বাঁধের স্থায়ী সমাধান হলে এখানে বন্যা হতো না। প্রতি বছর বাঁধ ভাঙলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।’ 

গাইবান্ধায় বন্যায় তলিয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর। ছবি: পিয়ারুল ইসলাম

শিমুলতলা গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪২) জানান, বানের পানিতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, আমন ধানসহ নানা ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি হাটু পানি-গলা পানি। গবাদি পশুর খাবারেরও মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বানের পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা ছাড়া কারও বাড়িতে কোনো গো খাদ্য নেই।

কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর  রাত সাড়ে ১০টার দিকে করতোয়া বাঁধের টোংরারদহ ও সুলতানপুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ধসে যায়। এতে উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এসব বানভাসি মানুষদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। 

মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পঞ্চম দফার বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার জনজীবন। পলাশবাড়ী উপজেলা ছাড়াও সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজসহ বহু স্থাপনা। বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বহু মাছের খামার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বন্যায় জেলায় এক হাজার হেক্টর জমির আমন ধানসহ রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানিতে পঁচে গেছে অর্ধ শতাধিক সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের খামার।

এ বিভাগের আরো খবর