বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিন্নির মামলায় চারজন খালাস যে কারণে

  •    
  • ৩ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৩১

খালাস চারজনের আইনজীবী ছিলেন বরগুনা জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. শাহজাহান। নিউজবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

আলোচিত এই হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন চারজন। তারা হলেন- মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, কামরুল ইসলাম সাইমুন ও মো. সাগর।

এই চারজনের আইনজীবী ছিলেন বরগুনা জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. শাহজাহান। নিউজবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রায় দেড় বছর আগে বরগুনা শহরের রাজপথে ঘিরে ধরে প্রকাশ্যে কোপানো হয় রিফাত শরীফকে। এই হত্যার ভিডিও চলে আসে ফেসবুকে। খুনিদের আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে স্তম্ভিত হয় মানুষ।

২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশ হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তিনি খুনিদের টেনে ধরছেন, স্বামীকে ঘিরে রেখেছেন, কিন্তু পারেননি।

সে সময় মিন্নি তার ভূমিকার কারণে প্রশংসিত হন।  রিফাত শরীফের বাবার করা মামলায় তাকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। পরে পুলিশ এই তদন্তে তার সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তাকেও আসামি করে। 

গত বুধবার দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে মিন্নিই একমাত্র জামিনে ছিলেন। তার আদালতে আসা, তার বক্তব্য নিয়েও ছিল বাড়তি নজর।

মামলায় যে চারজন খালাস পেয়েছেন তাদের মধ্যে মুসা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। 

কামরুল ইসলাম সাইমুন   কামরুল ইসলাম সাইমুনের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল, ২৬ জুন ঘটনার দিন রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কোপানোর পর মামলার প্রধান আসামি রিফাত ফরাজী তাকে (সাইমুন) ফোন দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে কলেজের সামনে যেতে বলেন। 

এ প্রসঙ্গে আইনজীবী মো. শাহজাহান নিউজবাংলাকে আরও জানিয়েছেন, সাইমুন সেই মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যান এবং রিফাত ফরাজীকে চাবি ও মোটরসাইকেল দিয়ে আসেন। সেই মোটরসাইকেলে রিফাত ফরাজী, তার ছোট ভাই রিশান ফরাজী ও নয়ন বন্ড পালিয়ে যান।

তিনি জানান, মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর কেউ এ ঘটনার পক্ষে কোনো সাক্ষ্য দেননি। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করতে পারেনি। 

আইনজীবী শাহজাহান জানান, সাইমুন মোটরসাইকেল চালাতে পারেন, মোটরসাইকেলটির মালিকানার কাগজ ও চালক সনদও আদালতে দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এ ছাড়াও সাইমুনকে রিফাত ফরাজী ফোন করে মোটরসাইকেল চেয়েছিলেন বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, আসলে (ওই সময়ে ৭ সেকেন্ডের যে ফোনকল) তা ছিল সাইমুনের বাবার। বিষয়গুলো রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।

মো. সাগর 

মো. সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, বন্ড ০০৭ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ঘটনার আগের দিন রাতে রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। ঘটনার দিন সকাল ৯টায় বরগুনা সরকারি কলেজে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গ্রুপে ম্যাসেজ দেয়া হয়। ম্যাসেজ দেখে সাগর ইমোজি দিয়ে দিয়েছিলেন। 

আইনজীবী শাহজাহান জানান, শুধু ইমোজি দেওয়ার কারণে সাগরকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাগরের কোনো ভূমিকা কিংবা কলেজে যাওয়ার কিংবা ভিডিওতে দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। 

রাফিউল ইসলাম রাব্বি

রাফিউল ইসলাম রাব্বির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ঘটনার দিন রাতে এক বন্ধু (মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত) এসে তার বাসায় থাকতে চান এবং বলেন, একটু ঝামেলা হয়েছে। 

রাফিউল তখনো রিফাতকে কোপানোর ঘটনাটি জানতেন না। রাতে যখন ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়, তখন ওই বন্ধু তাদের বাসা থেকে চলে যান। 

আইনজীবী শাহজাহান জানান, রাফিউলের তাকে আশ্রয় দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ফলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

পলাতক মুসা 

মুসার বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কিন্তু ঘটনার ভিডিওতে মুসার সেখানে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণও করতে পারেনি। ফলে মুসাও এ মামলায় খালাস পান বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শাহজাহান।

তিনি বলেন, এ মামলায় খালাস পাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। কেবল সাইমুন পুলিশের তদন্তে এই মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।

মিন্নি:

হত্যার ভিডিওতে মিন্নির দৃশ্যমান ভূমিকা আর পরে তার সম্পৃক্ততার তথ্যের কারণে এই মামলাটি আরও আলোচিত হয়।

বুধবার মামলার রায় প্রকাশ করে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজজ্জামান বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড (মূল পরিকল্পনাকারী) ছিলেন মিন্নি। তারই পরিকল্পনায় রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’

মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কারণ হিসেবে বিচারক বলেন, ‘রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের নির্মম বর্বরতা ও নির্মমতা মধ্যযুগীয় কায়দায়কেও হার মানিয়েছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে তাদের অনুসরণ করে অন্য যুবকরাও ধ্বংসের পথে যাবে। এসব আসামি সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’

সাক্ষ্য প্রমাণ উল্লেখ করে বিচারক বলেন, পাঁচজনের সহযোগী হিসেবে রিফাত হত্যায় অংশ নেন স্ত্রী মিন্নি। এ জন্য কলেজগেটের সামনে তিনি সময়ক্ষেপণও করেন।

এ বিভাগের আরো খবর