বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেয়া ফাঁসির রায়কে ‘অবিচার’ বলেছেন তার বাবা। বলেছেন, তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আশা করছেন, সেখানে ‘ন্যায়বিচার পাবেন’।
বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আসাদুজ্জামান মিয়া যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে মিন্নিকে এই হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ উল্লেখ করে তারও ফাঁসির আদেশ হয়।
মামলার রায় ঘোষণার দিন মেয়েকে নিয়ে আদালতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী তার মেয়ে নির্দোষ প্রমাণ হবেন।
তবে রায় হয়েছে উল্টো। প্রাণদণ্ড হয়েছে মেয়ের। রায় শুনে কেঁদেছেন বাবা। বলেন, ‘এই রায়কে আমি প্রত্যাখ্যান করি। আমার মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে।’
প্রকাশিত ভিডিওতে মিন্নির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তার বাবা বলেন, ‘সারাবিশ্ব দেখেছে মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখে অস্ত্রের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য যাব।’
মিন্নির পক্ষে মামলা চালানো আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেছেন, ‘মিন্নির বিষয়ে আমরা শিগগিরই উচ্চাদালতের শরণাপন্ন হব। আমরা মনে করি, উচ্চাদালতে মিন্নি খালাস পেয়ে মুক্ত হতে পারবে।’
এই মামলাটি নানা কারণে আলোচিত ছিল। ২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশ্য রাজপথে চার পাশে ঘিরে ধরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। সেখানে ছিলেন তার স্ত্রী মিন্নিও।
ভিডিওতে দেখা যায়, চার পাশে অসংখ্য মানুষ হত্যার ঘটনাটি দেখছে, একমাত্র মিন্নি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন রিফাতকে।
হত্যার ঘটনাটি দেশে শিউরে উঠে মানুষ। প্রশংসিত হন মিন্নি। রিফাতের বাবা যে মামলা করেন, তাতে মিন্নিকে করা হয় প্রধান সাক্ষী।
কিন্তু মোড় ঘুরে যায় তদন্তে। পুলিশ জানতে পারে, ‘খুনিদের সঙ্গে মিন্নির যোগাযোগ ছিল’। প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে আগে বিয়ে হয়েছিল তার। আর দুই জনের গোপন সম্পর্ক বজায় রাখা নিয়ে বিরোধে খুন করা হয় রিফাত শরীফকে।
তথ্য পেয়ে এই তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মিন্নির পরিবারের পক্ষ থেকে জোর গলায় অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছিল।
মেয়ের জামিন পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যান বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে মেয়েকে ঘরেও নিয়ে যান তিনি।
মামলার রায়ে বিচারক বলেন, মিন্নি এই হত্যার মূল হোতা। তিনিই সব পরিকল্পনা করে খুন করিয়েছেন রিফাতকে। তাই তাদের শাস্তি না হলে যুব সমাজ ধ্বংস হবে।
ফাঁসির আদেশের পরই মিন্নিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। একই সঙ্গে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনটার দিকে আদালত থেকে বের করে আলাদা গাড়িতে মিন্নিকে বরগুনা জেলা কারাগারে নেয়া হয়।