বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফকে হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে জেলার একটি আদালত। মামলার চার আসামিকে দেওয়া হয়েছে বেকসুর খালাস।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও।
বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আসাদুজ্জামান মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে মিন্নিসহ নয় আসামি উপস্থিত ছিলেন। মামলার ছয় নম্বর আসামি মুছা বন্ড পলাতক বিচার শুরুর আগ থেকেই।
মিন্নি ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় (টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত) এবং মো. হাসান।
খালাস পেয়েছেন মুছা বন্ড, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।
রায় শুনে আনন্দে কেঁদেছেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। তবে মিন্নির বাবা বলেছেন, তার মেয়ের ওপর ‘অবিচার হয়েছে’।
প্রাণদণ্ড পেয়েও বেপরোয়া মনোভাব দেখা গেছে কয়েকজন আসামির। একজন কথা বলেছেন হাসতে হাসতে। তিন জন ছিলেন পুরোপুরি নির্বিকার।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায় ঘোষণার তারিখ দেন বিচারক।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি। এই ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ালে তোলপাড় হয় দেশ জুড়ে।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা ১২ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী রাখা হয়। তবে তদন্তে তারও সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ ও কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচার শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭ নম্বর আসামি রাখা হয়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনসহ ৪৩ কার্যদিবসে বিচার শেষ হয়।
প্রতিক্রিয়া
রায়কে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় সকাল থেকেই উৎসুক মানুষদের ভিড় ছিল। ভিড় সামলাতে একপ্রকার হিমশিম খেতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীকে। রায় ঘোষণার পর বেশিরভাগই স্বস্তি প্রকাশ করেন।
রায় ঘোষণার পর খুন হওয়া রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘এক বছর ধরে আমাদের পরিবারের সদস্যরা কাঁদছি। আমাদের নির্ঘুম দিন কাটছে। ওই কান্না আর আজকের কান্নার মধ্যে অনেক তফাত। ১৫টা মাস এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। রায়ে রিফাতের আত্মা শান্তি পাবে।’
রিফাতের মা ডেইজী বেগম বলেন, ‘আমার রিফাতকে ওরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ওদের ফাঁসি কার্যকর হলেও আমি ও আমার ছেলের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।’
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভূবন চন্দ্র দাস বলেন, ‘বরগুনার জন্য এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা মনে করি এ রায়ের মধ্য দিয়ে বরগুনা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।’
তবে মেয়ে মিন্নির মৃত্যুদণ্ড মানতেই পারছেন না বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। বলেছেন , ‘এই রায়কে আমি প্রত্যাখ্যান করি। আমার মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে।’
নয়ন বন্ডের মায়ের প্রতিক্রিয়া
এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন নয়ন বন্ড। তদন্তে প্রকাশ পায় তার সঙ্গেও মিন্নির সম্পর্ক ছিল আর এর জেরেই খুন হতে হয়েছে রিফাত শরীফকে।
তদন্তের শুরুতেই ধরা পড়েন নয়ন বন্ড। পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান তিনি।
রায় ঘোষণার পর নয়নের মা সাহিদা বেগম বলেন, 'আমার ছেলে অন্যায় করলেও ন্যায়বিচারের দাবি রাখি আমরা। কিন্ত সে সুযোগ দেয়া হয়নি। আমি আমার ছেলেকে নির্বিচারে হত্যার বিচার চাই।'
গত ২ জুলাই ২০১৯ তারিখ ভোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নয়ন বন্ড।