করোনা পরীক্ষার জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে সাহেদ করিমকে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে ‘তার মতো ভদ্রবেশীদের’ জন্য দৃষ্টান্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক।
অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রায় ঘোষণা করে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
বিচারক বলেন, ‘আমাদের সমাজে সাহেদের মতো ভদ্রবেশে অনেক লোক রয়েছে, যা এই মামলার দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।’
ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতারণার অভিযোগ উঠতে থাকে। অভিযোগ উঠে, মানুষ ঠকিয়ে তিনি প্রায় শূন্য থেকে বিত্তশালী হয়েছেন। আর তার কাজ উদ্ধারে ব্যবহার করেছেন একটি বিশেষ অস্ত্র।
সাহেদের একটি অস্ত্র ছিল নামিদামি ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলোকে ব্যবহার করা। তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন, এই প্রচার চালিয়ে তার নানা উদ্দেশ্য সাধন করতেন বলে অভিযোগ আছে।
সাহেদের ‘ফাঁদে’ পড়েছে খোদ আওয়ামী লীগ। তিনি দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য পদও বাগিয়ে নেন। কীভাবে এটি হয়েছে, সেটি এখন দলের শীর্ষ নেতারাও বলতে পারছেন না।
এক টেলিভিশন টক শোতে কথা বলছেন সাহেদ করিম। ফাইল ছবি
গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করেছেন সাহেদ। নানাভাবে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানে নিজেকে একজন মহৎ ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
এই কৌশল আরও বেশ কয়েকজন প্রয়োগ করছেন। সম্প্রতি শিশু পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার এক নারীও একইভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে তাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রচার করতেন বলে তথ্য মিলেছে।
গ্রেফতারের পর আদালতকেও নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন সাহেদ, যেটি বিচারক উল্লেখ করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন ‘তিনি (সাহেদ) অত্যন্ত চালাক ও ধুরন্ধর ব্যক্তি। গাড়িতে অস্ত্র রাখা প্রমাণ হওয়ায় পর তিনি আদালতের কাছে কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না।’
সাহেদ ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাড়ি কিনেছিলেন। কিন্তু আদালতের কাছে সেটি স্বীকার করেননি। জানা সত্ত্বেও আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এই বিষয়টিও জানান বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘সাহেদ যে অপরাধী তা মামলার রায়ে প্রমাণ হয়েছে। এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।’
সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ আছে। এ নিয়ে মামলার পর আত্মগোপনে যাওয়া সাহেদকে গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্তে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। জানানো হয়, এ সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে।
করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে থাকার সময় ১৮ জুলাই রাতে সাহেদকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তার একটি গাড়ি থেকে গুলিসহ একটি পিস্তল এবং কিছু মাদক জব্দ করা হয়।
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র আইনে মামলায় প্রথম রায় এলো।
রায়ে বলেছেন, ওই অস্ত্র বাজেয়াপ্ত, যে গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তার মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর থেকে সাহেদের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠতে থাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। যদিও তার আইনজীবীরা ৩২টি মামলার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।