এবার অপহরণ, ধর্ষণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরিত্রহননের অভিযোগে মামলা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে। যে নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন, তিনিই করেছেন নতুন এই মামলা।
সোমবার রাতে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি হয়েছে। এই মামলাতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
একই নারী আগের দিন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। ওই মামলায় নুরের বিরুদ্ধে আনা হয় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই নারীর অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুন তাকে ধর্ষণ করেছেন। নুরকে জানানো হলে তিনি মামুনের পক্ষ নেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেছেন। কথা না শুনলে অনলাইনে অপপ্রচারের হুমকি দিয়েছেন।
এই মামলার পর সোমবার বিক্ষোভ করেন নুর। রাতে সেখান থেকে তাকে এবং ছয় সহযোগিকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে গভীর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে হলো দ্বিতীয় মামলাটি। এতে মামলায় অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহায়তা এবং হেয়প্রতিপিন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ আনা হয়৷
এই মামলার আসামিরা হলেন যথাক্রমে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা এবং আব্দুল্লাহিল বাকি।
আগের মামলায় হাসান আল মামুনকে প্রধান নম্বর ও নাজমুল হাসান সোহাগকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছিল। দুটি মামলাতেই তিন নম্বর আসামি নুর।
মামলার বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, 'একই বাদী প্রথমে লালবাগ থানায় মামলা করেন, গতকাল কোতোয়ালীতে মামলা করেন। বিষয়টা গুরত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।'
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, 'রাতে মামলাটি হয়েছে। আমরা তৎক্ষণাৎ তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তদন্তের আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে নুরসহ বাকি আসামিদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
মামলাগুলো ভিত্তিহীন দাবি করে নুরের স্ত্রী লুনা বলেন, ‘সে সবসময় সাধারণ মানুষের দলে। তাই পদে পদে তাকে ভুগতে হয়৷ সে পরিস্থিতির শিকার। আর কিছুই না।’
দ্বিতীয় মামলার প্রধান আসামি সোহাগ বলেন, ‘আমাদেরকে চাপে রাখার জন্যই সমস্ত কিছু করা হচ্ছে। এক থানায় মামলা করল, আমাদের সহযোদ্ধাদের অবস্থানের কারণে আমাদের ছেড়ে দিল। এখন একই মামলা আরেক থানায় করল। ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের একঘরে করে দেওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য।’
অভিযোগ সত্য কি না এমন প্রশ্নে সোহাগ বলেন, ‘আমরা সাফাই গাইতে চাই না। সত্য সামনে আসবেই।’
বাদীর অভিযোগ, হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।
ওই ঘটনার পর ওই শিক্ষর্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সোহাগ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। সুস্থ হওয়ার পর মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওই তরুণী।
তখন সোহাগ তাকে সহযোগিতার আশ্বাস নিয়ে মামুনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে লঞ্চে করে চাঁদপুরে যান। কিন্তু চাঁদপুরে মামুনকে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে ফেরার পথে লঞ্চে সোহাগও তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই তরুণী নুরের সঙ্গে দেখা করেন। নুর তাকে মীমাংসা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে পরে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানী করার হুমকি দেন।
এর মধ্যে মামলার আসামিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
প্রথম মামলার পর নুর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এনেছেন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। তার দাবি, তিনি সরকারের সমালোচনা করেন বলে সরকার চক্রান্ত করে এমন একটি মামলা করিয়েছে।