ভোর ছয়টা।
ঢাকার রমনা পার্কের মিন্টো রোড ঘেঁষা গেটের সামনে অপেক্ষায় গোটা দশেক মানুষ। পার্ককেন্দ্রিক শরীরচর্চা ক্লাব ‘উৎস’-এর সদস্য তারা। ব্যায়াম করবেন। কিন্তু ঢুকতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তাকর্মী। গেটের সামনের ফুটপাতেই শুরু হলো শরীর চর্চা।
ফুটপাতে জায়গা না হওয়ায় আরেকটি দল রাস্তায় ব্যায়াম করা শুরু করল। যারা ব্যায়াম করছিলেন, তাদের একজন আবদুল বারেক। তিনি বললেন, পার্কের ভেতরের ছায়াঘেরা পরিবেশটা খুব পছন্দ। কিন্তু দারোয়ান যেতে দেন না। তাই রাস্তায় চলে কসরত।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর রাজধানীর সবচেয়ে বড় পার্কটির সবকটি গেট বন্ধ হয়ে যায়। সারা দেশে যখন ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য, তখনও এই পার্কটি থাকছে বন্ধই। আর এতে অসন্তুষ্ট পার্কের নিয়মিত আগন্তুকরা।
আবদুল বারেক বলেন, ‘অনেকে পরিবারসহ ব্যায়াম করতে আসেন। এদের মধ্যে অনেক নারী সদস্যও রয়েছেন। পার্ক বন্ধ থাকায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
বারেকদের ক্লাবে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০। করোনার আগে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন ৭০ থেকে ৮০ জন। মহামারীকালে সেই সংখ্যাটা কমেছে। এর একটি কারণ, ভেতরে ঢুকতে বাধা। পার্ককেন্দ্রিক প্রাতঃভ্রমণ ও শরীরচর্চার জন্য ৭০টির মতো ক্লাবের তথ্য মিলেছে। একেকটির সদস্য সংখ্যা ৭০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত। পার্ক বন্ধ থাকায় শরীর চর্চা বন্ধ হয়ে আছে অনেকের।
এদের মধ্যে ডায়াবেটিসের রোগীদের ভোগান্তি আরও বেশি। বাইরের কোলাহলের মধ্যে নির্বিঘ্নে হাঁটা কঠিন। তাই অপেক্ষা, কবে খুলবে পার্ক।
কথা হচ্ছিল ‘ভোরের সাথী’ ক্লাবের প্রশিক্ষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রমনা পার্কে শরীরচর্চাভিত্তিক প্রায় ৬৮টি সংগঠন রয়েছে। পার্ক বন্ধ থাকায় অনেক ক্লাবের লোকজন আর ব্যায়াম করতে আসছেন না।’
প্রায় ১০০ জনের ক্লাব ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’-এর প্রধান কোচ মাহবুব আলম এতদিন পার্ক বন্ধ থাকার বিষয়টি মানতে পারছেন না। বললেন, ‘এখন সবই খোলা। এই অবস্থায় শুধু রমনা পার্ক বন্ধ রাখার কোনো যুক্তি নেই।’
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অন্তত সকাল নয়টা পর্যন্ত পার্ক খোলার ব্যবস্থা রাখার দাবি এই প্রশিক্ষকের।
পার্কটি খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পার্ক বন্ধ থাকায় অনেক ডায়াবেটিস রোগী হাঁটাচলা করতে পারছে না, যা তাদের জীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে।’
এই আইনজীবী জানান, রমনা পার্ক কেন খুলছে না, তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সাংবাদিক পরিচয়ে পার্কের ভেতরে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। তাদের একজন বলেন, 'পার্কে ঢুকতে না দেয়ার ব্যাপারে উপরের নির্দেশ আছে। অনুমতি ছাড়া আমরা কাউকেই ঢুকতে দিতে পারব না।'
দেশের পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন রমনা পার্কটি বন্ধ কেন, কবেই বা খুলবে, সে বিষয়ে পার্কের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার বলেন, 'আমি তো এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারব না।'