নেত্রকোণায় গত এক মাসের ব্যবধানে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর পর নৌ পরিবহনে নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার বিষয়টি নৌযান মালিকরা নিশ্চিত করছেন না। আর যাদের দেখভালের কথা, প্রশাসনের সেই কর্মকর্তাদের নজরদারিও নেই বললেই চলে। নৌযানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা, ফিটনেসের বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এতদিন ছিলই না। দুটি প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসন এতদিনে বলছে উদ্যোগ নেয়া হবে।
গত ৫ আগস্ট নেত্রকোণার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওরে ট্রলারডুবিতে মারা যান ১৮ জন। আর গতকাল বুধবার কলমাকান্দার গোমাই নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবিতে মারা গেছেন ১০ জন, এখনও নিখোঁজ ১০ থেকে ১২ জন।
আইনে নৌ পথে প্রতিটি নৌযানে ১৫টি লাইফ জ্যাকেট, পাঁচটি বয়া রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু যে দুটি নৌযান ডুবেছে, সেগুলোতে এসব ছিল না।
ছোট ছোট নৌকায় স্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে সেগুলোকে দ্রুতগামী করা হচ্ছে। এগুলোর ফিটনেস ঠিক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখছে না কেউ। প্রশিক্ষণ ছাড়াই যে কেউ হয়ে যাচ্ছেন চালক বা সারেং। হাওরে ঝড়ো বাতাস বা ঢেউয়ের মধ্যে নৌকা নিয়ন্ত্রণে দক্ষতার অভাব প্রায়ই প্রকট হয়ে ওঠে।
নৌকাগুলোতে সেগুলোতে কত জন যাত্রী বহন করা যাবে, সেই বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। প্রায়শই নৌকাগুলোতে যাত্রীর ভিড় থাকে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাদানুবাদও এক নিয়মিত চিত্র।
জেলায় প্রায় ২১৫ কিলোমিটার নৌপথে দুই থেকে প্রায় আড়াই হাজার নৌযানে একই চিত্র। অথচ এসব নৌযানে কলমাকান্দা, মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও আটপাড়া উপজেলার অন্তত ছয় লাখ বাসিন্দা নিয়মিত চলাচল করে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, তাহেরপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা, কিশোরগঞ্জের ইটনা, তাড়াইল উপজেলার মানুষও এই নদীপথে চলাচল করে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার কুলপতাক গ্রামের বাসিন্দা সুস্থির সরকার বলেন, ‘কী করব, আমাদের তো নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোনো উপায় নেই। কোন নৌকাতেই নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম থাকে না। প্রাণ হাতে নিয়েই আমরা চলাচল করি। দেখার কেউ নেই।‘
হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক শহীদ ইকবাল বলেন, ‘যে যেভাবে পারছে নৌকা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। রেজিস্ট্রেশন নেই। অথচ বছরের পর বছর ধরে তারা যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে।‘
জানতে চাইলে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, ‘কলমাকান্দায় নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। নৌকাগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে, যাতে করে যেনতেনভাবে চলাচল করতে না পারে।‘
‘১৫টি লাইফ জ্যাকেট ও পাঁচটি বয়ারসহ যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা যেন মানা হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।‘