'স্বামীও গেল চইলা আমার। সন্তানও গেল চইলা। এখন আমার কি অইব। আমি কই যামু।‘
‘পোলার লাশ দাফন অইল, বাপেরেও শুয়াইতে অইব। আমি একলা এত লাশ কই রাখমু। আল্লাহ এইডা কি করল আমার লগে। আমি কই যামু।'
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে রহিমা বেগমের বিলাপ যেন থামতেই চাইছে না। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে ছয় বছরের সন্তান জুবায়েরকে হারিয়ে মৃতপ্রায় স্বামীকে নিয়ে অলৌকিক কিছু ঘটার আশায় ছিলেন রহিমা। কিন্তু সেটা হয়নি। সন্তানের কাছে চলে গেলেন বাবা জুলহাসও।
এই দুর্ঘটনায় যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত, তাদের মধ্যে দুই জন এই বাবা-ছেলে। তিন সদস্যের পরিবারের দুই জনই হঠাৎ করেই হারিয়ে ফেলার পর রহিমা বেগমের পৃথিবীটা রঙহীন হয়ে গেছে। সন্তান ও স্বামীর শোকে তিনি এখন পাগলপ্রায়।
এই দুর্ঘটনার পর ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হাসপাতালে থাকা ১৩ জন চলে গেছেন এই পৃথিবী ছেড়ে। কিছুক্ষণ পর পরই চিকিৎসকরা ঘোষণা করছেন কারো না কারো মৃত্যুর কথা। আর বার্ন ইউনিটের সামনে পরিবেশ হয়ে গেছে কান্নায় ভারী।
অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা কেবল কেঁদে চলেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদেরকে নিয়েও শঙ্কা জেগেছে মনে। মনের মধ্যে চাপা ভয় নিয়েই না ঘুমিয়ে বাসে আছেন কাছের মানুষগুলো।
অভর্থনা কক্ষের শেষের দিকের একটি বেঞ্চে শুয়ে আছেন আজহার মিয়া। একটু পর পর সশব্দে কেঁদে উঠছেন। আর হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাইছেন। তার মেয়ের জামাই এখানে চিকিৎসাধীন।
'আমার মেয়ের জামাই ভিতরে। চিকিৎসা চলতাছে। বলছে ভালই এহন। তয় মান মানতেছে না। যেমনে একটার পর একটা খবর আইতাছে মরার। হেইনেতো ভয় লাগে মনে৷ কী অইবো কিছুই বুঝতাছি না'- বলছিলেন আজহার মিয়া।
দেড় বছর আগে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন আজহার। ছিলেন নাতির মুখ দেখার অপেক্ষায়। সন্তানসম্ভবা মেয়েকে কী জবাব দেবেন- এ নিয়েও বিলাপ করছিলেন প্রবীণ মানুষটি।
যারা এখনো চিকিৎসাধীন তাদের নিয়ে শংকায় চিকিৎসকরাও। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, দগ্ধ হয়ে ৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২৩ জন মারা গেছেন। বাকি ১৪ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগেরই শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। কারও দগ্ধের পরিমাণ কম হলেও তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাই কেউই আশঙ্কামুক্ত নয়।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।