বাবা-মা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ছয় বছরের ছেলে জুবায়েরকে দেখে রাখার সুযোগ নেই। তাই সে থাকত গ্রামে নানির বাড়ি।
করোনায় স্কুল বন্ধ, তাই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাবা-মায়ের কাছে এসেছিল শিশুটি। প্রাণ ভরে ভালোবাসা পাওয়া হলো না তার। বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়ে বিস্ফোরণের আগুনে প্রাণ হারিয়েছে সে।
এই ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী জুবায়েরই। বাবা জুলহাস ফারাজির অবস্থাও ভালো নয়। শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনিও।
সন্তান আর নেই, স্বামীর অবস্থা সঙ্গীন। পরিশ্রমী রহিমা খাতুনের কঠিন পৃথিবীতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস যেটুকুই ছিল, তা এই দুইজন মানুষকে ঘিরেই। সব স্বপ্ন ভেঙে এখন জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে মুহূর্তেই। হাসপাতালে বসে বিলাপ করে কাঁদছিলেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্বামীর কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন রহিমা। বলছিলেন, ছেলেটা দূরে ছিল, ভালো ছিল। কেন তার কাছে ফিরে এল?
‘আমার পোলারে মরণে ডাইকা আনছে। পোলা আমার সাথে থাহে না। বরিশালে নানা-নানির কাছে থাহে। ইশকুলে পড়ত। ইশকুল বন্ধ দেইখা বেড়াইতে আইছিল।‘
‘বেড়াইতে আইসা আমার পোলাডা দুনিয়া ছাইড়া চইলা গেল। তার লাশটাও দ্যাখতে পারলাম না’- কাঁন্নাভরা কণ্ঠে নিজের মতো করে বলে যাচ্ছিলেন রহিমা।
জুবায়েরের বাবা জুলহাস ছিলেন ধার্মিক। চাইতেন সন্তানও ধর্মচর্চা করুক। ছেলে বাড়িতে এলে নিজেই নিয়ে যেতেন মসজিদে।
রহিমা বলছিলেন, ‘বাপে কোনোদিন নামাজ কাযা করেনাই। পোলারেও লইয়া যাইত মসজিদে। এশার সময়ও নামাজ পড়তে গেল। আর কী অইয়া গেল’।
শুক্রবার এশার নামাজের পর ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার চামারবাড়ী এলাকায় বায়তুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণটি ঘটে। আর মসজিদের পাশেই একটি ঘর ভাড়া করে থাকে পরিবারটি। জুলহাস নারায়ণগঞ্জের খাজা গার্মেন্টসের স্যাম্পল ম্যান হিসেবে কাজ করেন।
বিস্ফোরণের পরপর বাবা-ছেলেকে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। রাত একটার দিকে মারা যায় জুবায়ের।
স্বামীর অবস্থা যে ভালো নয়-সেটি এরই মধ্যে জেনেছেন রহিমা। আশা করছেন বেঁচে ফিরবেন জীবনসঙ্গী।
‘আমার স্বামীও নাকি খুব খারাপ অবস্থায়। তারে দ্যাখতে পারিনাই এখনও। কয়ডা লাশ নিতে অইব কেউ কয় না। ঢুকতেই দেয় না।‘
কান্না আর বিলাপই এখন রহিমার জীবনের সঙ্গী।