একশ বিশ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কবিতার পঙক্তি ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ বঙ্গবন্ধুর জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের অভিশপ্ত প্রত্যুষে তিনি নির্ভয়ে নিঃশঙ্কচিত্তে আভিজাত্যের সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। তিনি একাত্তরের ২৫ মার্চের (২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে) ভয়াবহ রাতে ভয়শূন্যভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে থেকে দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন- ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’।
একাত্তরের ৭ মার্চ অপরাহ্নে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রের উপর যখন বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর সেনা হেলিকপ্টার উড্ডয়নরত, তখন তিনি বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কারাগারে বসেই বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যিনি অনশন শুরু করতে পারেন, তখন বাংলা ভাষাভাষী কাউকে আর বলতে হয় না যে রবীন্দ্রনাথ জীবন সায়াহ্নে ‘ওই মহামানব আসে’ বলে যে ইঙ্গিত করেছিলেন, তা সংগ্রামমুখর, রোমাঞ্চকর, মানবমুক্তির অনুভূতিশীলতায় পরিপূর্ণ সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত কিন্তু বহুবর্ণিল জীবনের সাথে সর্বাংশে সমার্থক।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় এসে প্রখ্যাত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে ফ্রস্টের প্রশ্ন ছিল- ‘(একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে) আপনার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে যখন আপনি বেরিয়ে এলেন, তখন কি ভেবেছিলেন আর কোনো দিন আপনি এখানে ফিরে আসতে পারবেন?’ প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘না, আমি তা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু আমার মনের কথা ছিল, আজ যদি আমি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোনো কারণ থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মাথা তুলে তাকাতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোনো হানি না ঘটে।’
ডেভিড ফ্রস্টের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘যে মানুষ মরতে রাজি তাকে কেউ মারতে পারে না। আপনি একজন মানুষকে হত্যা করতে পারেন, সে তো তার দেহ। কিন্তু তার আত্মাকে কি আপনি হত্যা করতে পারেন? না, তা কেউ পারে না। এটাই আমার বিশ্বাস।’
ফ্রস্টের আর এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রতিই আমার প্রথম ভালবাসা। আমি জানি আমি অমর নই। আজ কিংবা কাল, কিংবা পরশু আমাকে মরতে হবে। মানুষ মাত্রই মরণশীল। কাজেই আমার বিশ্বাস, মানুষ মৃত্যুবরণ করবে সাহসের সঙ্গে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের সামনে এভাবেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্ত, স্থির, নিরুদ্বেগ ও নির্ভীক। তিনি মাথা উঁচু রেখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
মানব জীবনের ঘটনাবলীর কত অদ্ভূত সাদৃশ্য আমরা দেখতে পাই। কারাগারে বসে লেখা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা, ২০০৭ সালে শোকাবহ আগস্ট মাসের ৭ তারিখে ঢাকায় স্থাপিত সাব জেলের অন্ধকার কক্ষে বসে। সেই ভূমিকায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাবন্দি হিসেবেই কাটাতে হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই তাঁর জীবনে বারবার এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনো আপস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন- এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তাই ছিল প্রতিনিয়ত তাঁর মনে। যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ আরাম আয়েশ ত্যাগ করে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা।’
বঙ্গবন্ধু আজীবন ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন, সত্যের পক্ষে ছিলেন ও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের পক্ষে ছিলেন। সত্যের শক্তি আর ন্যায়ের শক্তির চাইতে শক্তিধর আর কী হতে পারে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই ১৯৪৮ সালে বলতে পারেন, ‘পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। তাতে যাই হোক না কেন, আমরা প্রস্তুত আছি।’ এই উক্তির সাথেই সেই সাহসের সুর নিহিত। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে বাঙালি একদিন মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে প্রতিবাদ মুখর হয়েছিল।
সদ্যপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে প্রথমবার কারাগারে নেয়া হয় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। তারপর থেকে পাকিস্তানের ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক আমলে এক যুগেরও অধিক সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগারের অভ্যন্তরে সময় কাটাতে হয়। তবে কারাগারেই থাকুন অথবা কারাগারের বাইরে থাকুন, বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক চিন্তা ছিল বাঙালির সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণ।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৩ জানুয়ারি রমনার রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমাবেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যসহ ছয় দফা ও এগারো দফা কর্মসূচির ওপর বিশ্বস্ত থাকার শপথ গ্রহণ করেন। লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে গণপ্রতিনিধিদের সেদিন অপরাহ্নে নেয়া শপথবাণীর শেষ বাক্যটি ছিল ‘জনগণ অনুমোদিত আমাদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়াসী যে কোনো মহল ও অশুভশক্তির বিরুদ্ধে আমরা প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলব এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতঃ আপসহীন সংগ্রামের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকব।’
প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবেই উপলব্দি করেছিলেন যে নির্বাচিত এই সদস্যরা সম্ভবত পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ফ্লোরে শপথ নেয়ার সুযোগ পাবেন না। তাই সাধারণ মানুষের সামনে উন্মুক্ত ময়দানে সকল নির্বাচিত সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার রক্ষায় সকল আত্মত্যাগের শপথ গ্রহণ করে আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে তার সম্মোহনী নেতৃত্বে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে একাত্তরের ৭ মার্চে যখন শপথ গ্রহণের সেই স্থানে বঙ্গবন্ধু দশ লাখ মানুষের সামনে ঘোষণা দেন যে বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা ও ট্যাক্স প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সচিবালয় বন্ধ থাকবে ও পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো টাকা পাঠানো যাবে না, তখন শপথ অনুষ্ঠানের আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত বক্তব্য ও মন্তব্যের তাৎপর্য দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করে। বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’, তখন জনগণ সম্মুখ সমর ও মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু এক পর্যায়ে সম্মুখ সমরের কথা বলেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল রণাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের মূলমন্ত্র আর অবরুদ্ধ দেশবাসীর বীজমন্ত্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যখন বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে সম্মোহনী ও আবেগমথিত ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রচারিত হতো, তখন আক্ষরিক অর্থেই প্রত্যেক বাঙালির দেহের রোম খাড়া হয়ে যেত। স্মরণে আসতো বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক উক্তি- ‘সংগ্রামী বাংলা দুর্জয়, দুর্বিনীত। কাহারও অন্যায় প্রভুত্ব মানিয়া নেওয়ার জন্য, কাহারও কলোনি হইয়া, বাজার হইয়া থাকার জন্য বাংলার মানুষের জন্ম হয় নাই।’ পাকিস্তান সেনা শাষকদের নির্দেশে পাক হানাদার বাহিনি এদেশে যেভাবে বর্বরোচিত গণহত্যা, সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রামের পর গ্রাম অগ্নিসংযোগ ও পুরুষশূন্য করার মতো মানবতার বিরুদ্ধে নানা অপরাধ সংঘটিত করে, তখন এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আমাদের গেরিলারা প্রাণপণ যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। এ বিজয়ের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু তার অনুসারী বীরদের এভাবেই দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রস্তুত করেছিলেন যা কবি সুকান্তের উচ্চারণে বলতে পারি- ‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়;/ জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
মাথা উঁচু রাখার এই রাজনৈতিক দর্শনের উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়ে গেছেন। জেল, জুলুম, অত্যাচার, অবিচার, অন্যায় সব সহ্য করেও বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বের শিক্ষাই হচ্ছে আত্মত্যাগ অনুশীলনের শিক্ষা।
বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণের সাথে সাথেই আমরা অনুভব করি দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের নিবিড় স্পন্দন, সকল বন্ধন থেকে মুক্তির প্রাণোচ্ছ্বাস। মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা, আস্থা, বিশ্বাস ও আশ্রয়ের প্রতীক হয়ে চির ভাস্বর থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালির যে সম্পর্ক, তাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে সেই সম্পর্ক কখনও ছিন্ন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক, বাংলাদেশের মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক একটি চিরস্থায়ী সম্পর্ক, যে কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রকৃত অর্থে মৃত্যুঞ্জয়ী। ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা যায় না। তিনি বাঙালি জাতির মাঝে চিরঞ্জীব থাকবেন। তিনি বাঙালির চিরস্বজন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল লক্ষ্যই ছিল বাঙালিসহ সকল শোষিত জনগণের মুক্তি ও পৃথিবীর সার্বিক প্রগতি। তিনি মানুষ, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি ও বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রাম করেই জীবনদান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বজনীনতা প্রকাশ পায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে তার প্রদত্ত ভাষণ-অভিভাষণে।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে, ১৯৭৫ সালের ২ মে জ্যামাইকার কিংস্টনে ২০তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘খুব বিলম্ব না হওয়ার আগেই ন্যায়বিচার ও পারস্পারিক নির্ভরশীলাতাভিত্তিক একটি নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপনে কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহ কাজ করবে।’
১৯৭৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে আমাদের মধ্যে মানবিক ঐক্যবোধ ও ভাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণ। বর্তমানের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটা ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যুক্তির শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা। এ ব্যবস্থায় থাকবে নিজের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রতিটি দেশের সার্বভৌম অধিকারের নিশ্চয়তা।’
তরুণদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অগাধ স্নেহ, তিনি তাদের ভালবাসতেন, তাদের ওপর আস্থা রাখতেন। ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুবলীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু আত্মশুদ্ধ, আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মসংযমী ও আত্মসমালোচনায় আগ্রহী যুবসমাজের উন্মেষ ও বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। স্বাধীন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য যুবশক্তির প্রতি বঙ্গবন্ধু স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায় বলেন- ‘ওয়াদা কর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবি।’
বঙ্গবন্ধুর তার সব ভাষণেই সততার কথা বলেছেন, দেশপ্রেমের কথা বলেছেন, মানুষকে ভালবাসার কথা বলেছেন, সাহসিকতা ও আপসহীনতার কথা বলেছেন। বলেছেন কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বপালনের কথা।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেকে উত্তরোত্তর পরিশুদ্ধ করবে। ১৯৭৫-এর ১৯ জুন বঙ্গবন্ধু এক ভাষণে নিজেই বলেছিলেন- ‘আত্মসমালোচনা না করলে আত্মশুদ্ধি করা যায় না। আমি ভুল নিশ্চয়ই করব, আমি ফেরেশতা নই, শয়তানও নই। আমি মানুষ, আমি ভুল করবই। আমি ভুল করলে আমার মনে থাকতে হবে, আই ক্যান রেকটিফাই মাইসেলফ। আমি যদি নিজেকে রেকটিফাই করতে পারি সেখানেই আমার বাহাদুরি।’
পরিশীলিত, পরিমার্জিত, পরিশুদ্ধ, পরোপকারী, পরশ্রীকাতরতাবিমুখ, পরিমিতিবোধসম্পন্ন ও সাহসী মানুষই ছিল বঙ্গবন্ধুর কাছে সোনার মানুষ। বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সেই সূত্রও দিয়ে গেছেন। জীবনে তিনি বহুবার বলেছেন, ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য আমার সোনার মানুষ চাই।’ যে প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’, সে দেশের প্রত্যকে নাগরকি হবে সোনার মানুষ- এই ছিল উচ্চ শিরের বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রত্যয় ও প্রত্যাশা।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালিয়ের সাবেক উপাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক