দেশের উত্ত-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশার দাপট। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ। স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
মেহেরপুর জেলা জুড়ে ঘন কুয়াশার ফলে অসুবিধায় পড়েছেন দিনমজুর, যানবাহন চালক ও পথচারীরা। সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সড়কে চলাচল করা যানবাহন দুর্ঘটনা এড়াতে জ্বালিয়ে রাখছেন হেডলাইট।
শীতবস্ত্রের অভাবে কাবু হয়ে পড়ছেন অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু-বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। শীতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে খামারিসহ সৌখিন চাষীদের। এ ধরনের শীত আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রোববার সকাল থেকে জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার কারণে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে ভ্যান বা ক্ষেত খামারে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকদের জবুথবু অবস্থায় দেখা মিলছে সড়কের পাশে। অনেকই শীত নিবারনের জন্য খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক শফি বলেন, ‘আমাদের এখন সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। যেখানে যাত্রী নিয়ে আমাদের যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, আমাদের বেড়ে যাচ্ছে গ্যাস খরচ।
ভিক্ষুক জরিনা খাতুন বলেন, ‘এই আবহওয়াতে বাড়ি থেকে বের হওয়াই কঠিন। তবে বাড়িতে বসে থাকলে খাবো ঈ? তাই বাধ্য হয়ে বাজারে এসেছি।’
জেলার কামারখালি গ্রামের দিনমজুর মহিবুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকালে ইটভাটায় কাজে যেতে হয়- যতই কুয়াশা বা শীত পড়ুক না কেন। কারণ কাজ করলে মুখে ভাত উঠবে। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে, তাদের খরচ জোগাতে হয়।
উপজেলার বাওট গ্রামের নাহারুল ইসলাম জানান, আজ দুদিন হতে চলছে সকাল বেলা শীতের পোশাক খুলতে দুপুর ১২টা বেজে যাচ্ছে। মাঠের কাজ করব কখন। আর ফসলের মাঠে কুয়াশায় ভিজে থাকছে। ফসলের মাঠে নামলে শরীর ভিজে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের বামন্দী ব্লক সুপার জাফর কুদ্দুস জানান, ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। অথচ এই ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে হবে। আর ধানের চারার যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য চারার মাথায় জমা হওয়া শিশির ফেলে দিতে হবে।
এ অঞ্চলের আবহওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, আজ রোববার সকাল ৯টায় এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৮ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন জেলায় এমন আবহওয়া অব্যাহত থাকবে।