বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওদের ভাষা ‘ইশারা’, সম্পর্ক বন্ধুত্বের

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২৪ ১৬:৪৪

সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। রয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো অ্যাকাউন্ট। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম এগুলোই। ভিডিও কলে কথা হয় তাদের। তারা বিশেষ দিনগুলোতে সবাই একত্রিত হন। মাঝে মধ্যে তাদের টিমে যোগ হয় একই সমস্যায় আক্রান্ত আরও দু-একজন।

ভালবাসা, যত্ন আর সহমর্মিতা পেলে ওদের আর কিছু লাগে না। অন্যায় করেন না এবং তা পছন্দও করেন না।

স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা। ভিনদেশিও নন। তবে ভাষাটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে পুরোই ভিন্ন। কথা বলেন ইশারায়। কারণ ওরা জন্মগতভাবে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

জন্মগত এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা এই পাঁচজনের গল্পটা অন্যদের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। তারা একে অপরের বন্ধু। একেকজনের বাড়ি একেক জায়গায়। তবে বন্ধনটা বেশ পোক্ত। কোথাও বেড়াতে কিংবা ঘুরতে গেলে একত্রিত হন তারা।

ওদের ভাষা অন্যরা তেমন না বুঝলেও নিজেরা ঠিকই বোঝেন। ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়াতেও জড়ান তারা, হয় মান-অভিমানও। তাদের এই বন্ধুত্ব উপভোগ করেন স্থানীয়রাও।

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এই পাঁচ বন্ধু হলেন এনামুল, সাজু, ফিরোজ, রায়হান ও ফারদিন হাসান শাকিল। ওরা প্রায় সমবয়সী। এদের মধ্যে এনামুলের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ভোলা পাড়া গ্রামে। একই ইউনিয়নের দলুয়াপাড়ায় বাড়ি সাজুর। ফিরোজের বাড়িও এই ইউনিয়নের প্রধানপাড়ায়। অপরদিকে রায়হানের বাড়ি জেলা শহরের কামাত পাড়ায় এবং শাকিলের কায়েতপাড়ায়।

প্রতিবন্ধী এই পাঁচজনের সঙ্গে মিশে জানা গেছে, সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। রয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো অ্যাকাউন্ট। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম এগুলোই। ভিডিও কলে কথা হয় তাদের। তারা বিশেষ দিনগুলোতে সবাই একত্রিত হন। মাঝে মধ্যে তাদের টিমে যোগ হয় একই সমস্যায় আক্রান্ত আর‌ো দু-একজন।

শুক্রবার (২২ জুন) রাতে প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাদের টিমের চারজনের। এদিন অনুপস্থিত ছিলেন ফিরোজ। ইশারায় তারা জানালেন, অভিমান করে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন ফিরোজ। ম্যাসেঞ্জারে অ্যাকটিভ থাকলেও তাদের সঙ্গে কথা হয় না ঈদের দিন থেকে।

অভিমানের কারণ হিসেবে জানা গেল, ঈদের দিন ফিরোজকে রেখেই বাকিরা ঘুরতে বের হন। দেখা করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে। ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেসব ছবি দেখে মনঃক্ষুণ্ন হন ফিরোজ। তবে এনামুল ও সাজুর দাবি- সেদিন তাকে ভিডিও কলে পাওয়া যায়নি। এই অভিমান বেশিদিন থাকবে না বলেও জানালেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা সবাই সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এছাড়া সবাই কাজ করে উপার্জন করেন। দিনভর কাজ করে তারা একত্র হন সন্ধ্যার পর। প্রতিদিন সবাই একত্র হতে না পারলেও একই ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রামে বাড়ি হওয়ায় এনামুল, সাজু ও ফিরোজকে একসঙ্গে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই। স্থানীয় তালমা বাজারে তাদের আড্ডা চলে মধ্যরাত অবধি।

তালমা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তাদের চালচলন সবাইকে আনন্দ দেয়। মানুষের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারে ওরা। অপরিচিত কেউ তাদেরকে দেখলে মনোযোগ সহকারে তাদের কাণ্ড উপভোগ করেন। তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেন। আমরাও তাদের সঙ্গে মজা করি।’

হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাহাতাব প্রধান মারিফ বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওদের দারুণ সুসম্পর্ক। মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে এসেও আনন্দ-উল্লাস করে। ছোটখাটো আবদার করে, তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে আমার কাছে অভিযোগ দেয়। বুঝিয়ে বললে সহজেই বুঝে যায়। ওরা উপহার পেলে ভীষণ খুশি হয়।’

সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রুমানা খানম বলেন, ‘এনামুল, সাজু, ফিরোজ- এই তিনজন আমার ওয়ার্ডের। এদের দেখে কেউ প্রতিবন্ধী বলবে না। বেশ পরিপাটি হয়ে চলে, দেখতেও সুদর্শন। বর্তমানে তারা প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা পায়। এছাড়া তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর