বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়

  •    
  • ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ২৩:০৭

ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর দু’দিন আগে সোমবার সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিন নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যায়।

ঈদের আনন্দ স্বজন-প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে সদরঘাটে। রাজধানীর প্রধান এই নদী বন্দরের লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের রুটের লঞ্চগুলো সোমবার ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। নির্ধারিত সময়ে যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে গেছে।

অনেকটা স্বস্তি নিয়েই শেকড়ে ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলোকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে।

ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর দু’দিন আগে সোমবার সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিন নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যায়।

কিছুদিন আগেও যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়তো না সেখানে এখন লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ছে।

খালি থাকছে না লঞ্চগুলোর কেবিন। ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীর ভিড়। এছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী যাত্রীদের অনেকেই ঈদের আগের দিনের কেবিন বুকিং দিতে এসেছেন। আবার লঞ্চের ডেকে জায়গা করে নিতেও অনেকে আগেভাগে ঘাটে চলে এসেছেন।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সোমবার বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশালগামী লঞ্চে ভিড় করছেন। পটুয়াখালী, বগা, ইলিশা- এসব রুটেও যাত্রী আসতে শুরু করেছে। যাত্রীর চাপ আর লঞ্চে ভিড় সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে।

সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি৷ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চ-সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।

ভোলাগামী যাত্রী আহনাফ মুন্সি বলেন, ‘আমি লঞ্চের নিয়মিত যাত্রী। ঈদ উপলক্ষে অফিস ছুটি হওয়ায় আগেভাগেই বাড়ি যাচ্ছি। পরিচিত হওয়ায় কেবিন বুকিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করছি স্বচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারব।’

এমডি ফারহান-৮ লঞ্চে পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফাহাদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময়মতো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আর ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠতে পেরে এখন অনেক ভালো লাগছে।’

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মনির হোসেন ঈদ করতে পরিবার নিয়ে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক ভিড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়। একা হলে সমস্যা ছিল না, পরিবার নিয়ে এতো ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠতে অনেক কষ্ট হবে।’

অন্যদিকে যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চে উঠতে পারেননি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের যাত্রী হৃদয় তালুকদার বলেন, ‘ঈদের আগে লঞ্চে অনেক ভিড় হয়। তাই জায়গা পাওয়ার আশায় আগেই চলে এসেছি। তবে এবার আগের তুলনায় ভিড় কম। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীও নেই।’

চরফ্যাশনগামী তাসরিফ-৪ লঞ্চের যাত্রী রানা আহমেদ বলেন, ‘ঈদ করতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। পরিবারের লোকজনসহ মালামাল নিয়ে অনেক কষ্টে লঞ্চে উঠেছি। ভোর হলেই বাড়ির ঘাটে নেমে পড়ব। পরিবার নিয়ে নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার জন্য আমাদের লঞ্চই ভরসা।’

ভোলার চরফ্যাশন অভিমুখী এমভি ফারহান-৩ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন আল আমিন শিকদার। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, যাত্রীর প্রচণ্ড চাপ ঘাটে। লঞ্চের টিকিট কেটেও উঠতে পারলাম না। ভিড়ের কারণে কোনোভাবেই লঞ্চে উঠতে পারিনি। এখন পরবর্তী লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছি।’

বরিশাল রুটে স্পেশাল সার্ভিস দেয়া লঞ্চ মানামীতেও দেখা যায় যাত্রীর ভিড়। এই লঞ্চের সুপারভাইজার মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আজই আমাদের প্রথম যাত্রা। সরকারি অফিস ছুটি হওয়ার আগেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। প্রায় সবকটি কেবিনও বুকিং হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে যাবে মনে হচ্ছে।’

কর্ণফুলী-১১ লঞ্চের চালক আবু হাসান বলেন, ‘এবারের ঈদে আজকেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনও দেখছি না। আশা করছি ভালোভাবেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারব।’

সুন্দরবন লঞ্চের ঢাকা অফিসের সুপারভাইজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সারা বছর যাত্রী পাই না। ঈদের ছুটি হলে লঞ্চে যাত্রী আসে। টার্মিনালে যাত্রী দেখা গেলেও লঞ্চে আমাদের আশানুরূপ যাত্রী নেই।’

লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। শেষ সময়ে একটু ভিড় বাড়বেই। তবে সেটা আশানুরূপ নয়। অন্যবার এ সময়ে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে রোটেশন ভেঙে দিয়ে স্পেশাল লঞ্চ চলাচল করত। আর এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিডিউল লঞ্চই যাত্রী বোঝাই হচ্ছে না। আশা করছি শেষ পর্যন্ত যাত্রীর চাপ আরেকটু বাড়বে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হবে।

‘তবে ঘরমুখী মানুষের স্রোত কার্যত শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। ওইদিন থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ঈদের আগের দুদিনসহ সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়ছে। সে হিসাবে প্রতিদিন ৩ লাখের বেশি যাত্রী সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যাবে বলে আশা করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নৌযানের কোনো স্বল্পতা নেই। সোমবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে গেছে সারা দিনে ৫৮টি। রাতে আরও বেশকিছু লঞ্চ ছাড়বে। আমরা গড়ে প্রতিদিন ১০০টি লঞ্চ পন্টুনে রেডি রাখছি।’

এদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।

সদরঘাট নৌ পুলিশ থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের সদস্যরা প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রেখেছে। কোনো লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যাওয়ার সুযোগ নেই। লঞ্চে নির্ধারিত যাত্রী হলেই পন্টুন ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর