চৈত্রের গরমে রোজাদারদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো বৃষ্টি। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাজধানীতে ঝেপে বৃষ্টি নেমে আসে। এই বৃষ্টিতে ঘরমুখো মানুষ কিছুটা বিপাকে পড়ে যায়। স্থানে স্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়ে যায় যানজটের তীব্রতা।
তারপরও সবকিছু ছাপিয়ে ধূলার নগরে এমন বৃষ্টি আশীর্বাদ বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী। ঝুম বৃষ্টির কল্যাণে কমে এসেছে শহরের তাপমাত্রা। সবমিলিয়ে চৈত্রের শুরুতে এমন বৃষ্টি বিশেষত রোজাদারদের জন্য বাড়তি স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বাংলা ১৪৩০ সনের শেষ মাস চৈত্রের পঞ্চম দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। তবে তাপমাত্রা ছিল বেশি। গুমোট গরমে তপ্ত ছিল নগরী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘের ঘনঘটা বাড়তে শুরু করে। বেলা আড়াইটা নাগাদ রাজধানীর আকাশ কালো হয়ে আসে। বিকেল পৌনে ৩টার ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি।
ঝুম বৃষ্টিতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে পণ্যসামগ্রী সামলাতে দোকানিদের ব্যস্ততা। ছবি: ফোকাস বাংলা
মুষলধারার এই বৃষ্টি আর বাতাসের ঝাপটায় ছাতা মাথায় দিয়েও রেহাই মেলেনি। ভিজে গেছেন সবাই। মুহূর্তেই রাজপথের স্থানে স্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেটে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অফিস থেকে বাসার উদ্দেশে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকেই।
ভোগান্তিতে পড়েছেন ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানিরাও। রাস্তায় ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে বসা দোকানিদের মধ্যেও লেগে যায় হুড়োহুড়ি।
মেট্রো ট্রেন বন্ধ আধ ঘণ্টা
বৃষ্টির মধ্যে মেট্রো ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কারিগরি জটিলতায় মেট্রো ট্রেন আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে ঘরমুখো মানুষ।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীতে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পৌনে ৫টার দিকে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে করে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষ বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে আটকা পড়ে যান। ক্রমে ভিড় জমতে থাকে স্টেশনগুলোতে।
কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মেট্রো ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
এদিকে দেশের মধ্যাঞ্চলে বুধবার থেকে কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বলা হয়েছে, এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় হালকা তাপপ্রবাহ চলছে। মাসের শেষ দিকে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, পশ্চিমা লঘুচাপে মেঘরাশি প্রবেশ করছে দেশের ভৌগোলিক সীমায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই মেঘমালা সরাসরি আসছে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে। তাই সারাদেশে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ২০ মার্চ বুধবার থেকে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা ও রংপুরের কিছু এলাকায় কালবৈশাখী হানা দিতে পারে। এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হতে পারে৷ এদিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকায় ৩৩ দশমিক ৩, রাজশাহীতে ৩৪ দশমিক ৪, রংপুরে ৩৪, ময়মনসিংহে ৩২, সিলেটে ৩৩ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৯, খুলনায় ৩১ এবং বরিশালে ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।