ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো ছিলেন সাদি মহম্মদ। ১৯৭৩ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায়ই ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। কিন্তু যে ছেলেটি বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত জগতের কিংবদন্তি তারকা হবেন তার তো প্রকৌশলে মন বসার কথা নয়।
সুতরাং, ১৯৭৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে গানের জগতে পথচলা এই কিংবদন্তির।
সেই মানুষটি শত অভিমান বুকে নিয়ে চলে গেলেন নীরবে। এই সংগীত সাধকের হাত ধরে আজ অনেক রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। সেই মানুষের এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়াটা শোকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ভক্ত-শুধানুধ্যায়ীদের মাঝে।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সাদিকেসমাহিত করা হয়েছে সাদি মহম্মদকে।
সাদি মহম্মদের মা মারা যান গত বছর। মা হারানোর বেদনা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এরপর অনেকটাই নীরব হয়ে যান তিনি।
সাদি মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। তার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা। বঙ্গবন্ধু-পুত্র শহীদ শেখ কামালও সেখানে আসতেন।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ। মূলত সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে বাড়িটি।
পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের পুরো বাড়ি। গুলি করে হত্যা করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে। পরে তার বাবার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও আধুনিক গানও গেয়েছেন সাদি মহম্মদ। এ ছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
বর্ষা ও বসন্তের গান ভীষণ পছন্দ করতেন সাদি মহম্মদ। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সিনেমা ছাড়াও হলিউডের ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’, ‘রোমান হলিডে’ ছিল তার পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া বই পড়তে ভালোবাসতেন।