প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ৭ দফা সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ-বিজ্ঞানীরা। সুপারিশমালার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ‘টাইম ফর ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন পরিবেশের ওপর দুদিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে।
২ ও ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশমালার তথ্য জানানো হয়েছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইকোসিস্টেম পরিষেবা, সামাজিক সুবিধা এবং জৈবিক সম্পদ সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পোল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি থেকে ২৪৫ জন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এতে ১২৮টি ওরাল প্রেজেন্টেশন, ৪৮টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন, ৬টি কি-নোট পেপারসহ ১৮৩টি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
সম্মেলনে টেকনিক্যাল সেশনের বেস্ট স্পিকার অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড এবং আউটস্ট্যান্ডিং রেজাল্টস-এর পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
অংশগ্রহণকারী গবেষক-বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।
সম্মেলনে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন প্রধান ও সম্মেলন আয়োজক কমিটির অর্গানাইজিং সেক্রেটারি প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশ-১: প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার সুবিধাগুলো তিনটি বিস্তৃত বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে- ইকোসিস্টেম পরিষেবা (পানিসম্পদ সংরক্ষণ, মৃত্তিকা সংরক্ষণ, পুষ্টির সঞ্চয় এবং সাইকেল চালানো, বাস্তুতন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ, দূষণ, ভাঙন ও শোষণ, জলবায়ু স্থিতিশীলতায় অবদান এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে পুনরুদ্ধার), জৈবিক সম্পদ (খাদ্য, ওষুধ, বনজ পণ্য, প্রজনন স্টক, জনসংখ্যার জলাধার ও ভবিষ্যতের সম্পদ) এবং সামাজিক সুবিধা (গবেষণা এবং শিক্ষা, বিনোদন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়/দার্শনিক মূল্যবোধ)।
সুপারিশ-২: প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর হুমকি প্রশমিত করতে কিছু প্রাকৃতিক বন, জলাভূমি, পাহাড় ইত্যাদি জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা প্রয়োজন; শ্রেণীবদ্ধ এলাকায় সব ধরনের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা উচিত; প্রকৃতি থেকে অপরিকল্পিত সম্পদ সংগ্রহ আর বাড়ানো উচিত নয়; সব ধরনের দূষণ কমাতে হবে; নেটিভ ইকোসিস্টেমকে অবশ্যই এলিয়েন ইনভেসিভ প্রজাতি থেকে রক্ষা করতে হবে।
সুপারিশ-৩: বিদ্যমান প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশকে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে- জৈবিক বৈচিত্র্যের ওপর কনভেনশন, কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অন অ্যানডেঞ্জার্ড স্পেসিস অফ ওয়াইল্ড ফানা অ্যান্ড ফ্লোরা, কনভেনশন অফ ওয়ার্ল্ড কালচারাল অ্যান্ড ন্যাচারাল হেরিটেজ, বন্যপ্রাণীর পরিযায়ী প্রজাতির সংরক্ষণের কনভেনশন, রামসার কনভেনশন, জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল, জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা আইন এবং জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল কর্মপরিকল্পনা।
সুপারিশ-৪: পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কাছাকাছি কোনো উন্নয়ন প্রকল্প চালু করার আগে যথাযথ পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অবশ্যই করতে হবে।
সুপারিশ-৫: প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব এবং এর আবাসস্থল সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সুপারিশ-৬: অংশগ্রহণমূলক সম্প্রদায় ব্যবস্থাপনা প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
সুপারিশ-৭: প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বিত গবেষণা প্রয়োজন।